ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার মিছিলে আরও একটি সিরিজ হার

সিরিজ

বাংলাদেশ মেইল::

কথায় এক, কাজে আরেক। এই টেস্ট শুরুর আগে বাংলাদেশের অধিনায়ক মুমিনুল হক সংবাদ সম্মেলনে ভরা মজলিশে জানিয়েছিলেন ঢাকায় জিতে সিরিজ নিশ্চিতের কথা। আদতে তা হলো কোথায়? উল্টো ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার মিছিলে হারের পুনরাবৃত্তি।  শুক্রবার (২৭ মে)  টেস্টের পঞ্চম দিন দেড় সেশনেরও বেশি সময় আগে বাংলাদেশকে লঙ্কানরা যেন স্রেফ উড়িয়ে দেয়। বাংলাদেশের দেওয়া ২৯ রানের লক্ষ্য মাত্র ৩ ওভারেই কোনো উইকেট না হারিয়ে টপকে যায় শ্রীলঙ্কা

ওশাদা ফার্নান্দো খেলেন টি-টোয়েন্টি মেজাজে। মাত্র ৯ বলে ৩ চার, ১ ছয়ে করেন ২১ রান। আরেক ওপেনার দিমুথ করুণারত্নে ৯ বলে ৭ রান করেন। দুজনেই অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন। বাংলাদেশের মাটিতে এখন পর্যন্ত চারটি টেস্ট সিরিজ খেলে চারটিতেই জিতেছে দলটি। তবে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় এই সিরিজের গুরুত্ব অনেক। শেষ দিন শুরুতেই আউট হয়ে যান মুশফিক (ছবি: বিসিবি)

বাংলাদেশের হারের চিত্রনাট্য লেখা হয় চতুর্থ দিন শেষ বিকালে। শ্রীলঙ্কার লিড ছিল ১৪১ রানের। স্বাগতিক ব্যাটসম্যানদের কাজ ছিল ক্রিজে টিকে থাকা। চারটি সেশন কাটিয়ে দিতে পারলে গল্পটা ভিন্ন হতো। তা আর হলো কই! দুই পেসারের তোপে শেষ বিকেলে তাসের ঘরের মতো ভেঙে যায় বাংলাদেশের টপ অর্ডার। ২৩ রানে নেই ৪ উইকেট। কোনোমতে দিন শেষ করেন মুশফিকুর রহিম-লিটন দাস।

অনেকে স্বপ্ন দেখতে থাকেন, প্রথম ইনিংসের মতো মহাকাব্য লিখবেন তারা। সবসময় কি আর এক যায়? পঞ্চম দিন সকালেই ফেরেন মুশফিক (২৩)। এরপর সাকিব আল হাসান ও লিটন প্রতিরোধ গড়েন। তারা শধু হারটাই বিলম্ব করেছেন, ইনিংস ব্যবধানে হার থেকে বাঁচিয়েছেন। দুজনে প্রথম সেশন কাটিয়ে দেন দারুণ খেলেই। তাদের ব্যাটে শতাধিক রানের জুটিও দেখে বাংলাদেশ। দুজনেই ফিফটি করেন। কিন্ত দ্বিতীয় সেশনে ভাগ্যদেবী যে অন্য কিছু লেখে রেখেছেন।

আসিথা ফার্নান্দোকে ৫২ রানে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে লিটন সাজঘরে ফেরেন। শতাধিক রানের সঙ্গী ফেরার পর সাকিবও আর পারেননি। দুজনের জুটি ভাঙার পর মাত্র ১৩ রানে অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ। সাকিবের ব্যাট থেকে আসে ৫৮ রান। দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের একমাত্র ফিফটি বলতে সাকিব-লিটনের ফিফটি।

শের-ই-বাংলাকে বলা হয় স্পিনের স্বর্গরাজ্য। কিন্তু লঙ্কানরা খেল দেখিয়েছে বরাবরের মতো পেস আক্রমণে। আজ আসিথা একাই নেন ৬ উইকেট। এটি তার ক্যারিয়ার সেরা। আগের ইনিংসেও ক্যারিয়ারের প্রথম ফাইফার নিয়েছিলেন কাসুন রাজিথা। পুরো সিরিজে ৩ ইনিংসে ২৪ উইকেট নিয়েছেন আসিথা-রাজিথা জুটি! আসিথা ১৩ ও রাজিথা নেন ১১টি। প্রথম টেস্টে রাজিথা খেলেন বিশ্ব ফার্নান্দোর কনকাশন সাব হিসেবে, সেখানেই বাজিমাত করেন। আর পেছনে তাকাতে হয়নি।

লঙ্কান পেসাররা যেখান মুড়ি-মুরকির মতো উইকেট নিয়েছেন সেখানে বাংলাদেশের পেসাররা ছিলেন নীরব। সময়মতো উইকেট নিয়ে ব্রেক থ্রু এনে দিতে পারেননি। দুই পেসার নিয়েছেন মাত্র ৪ উইকেট। তার মধ্যে ঢাকা টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ইবাদত নেন ৪টি উইকেট। তিনি চট্টগ্রাম টেস্ট দলে ছিলেন না। খালেদ ২ ম্যাচ খেলে উইকেট শূন্য! ২ ম্যাচে সর্বোচ্চ ৯ উইকেট নিয়েছেন সাকিব।

কিন্তু শের-ই-বাংলার এই চেনা মাঠে ব্যাটসম্যানদের এমন ব্যর্থতা কেন! দুই ইনিংসেই শুরুতেই ধস নেমেছে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে। প্রথম ইনিংসে ৬ষ্ঠ উইকেটে মুশফিক-লিটন ২৭৩ রানের জুটি গড়ে প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখেছিলেন। ৩৬৫ রান করে মান বাঁচায়! মুশফিক অপরাজিত ছিলেন ১৭৫ রানে আর লিটন ১৪১ রান করেন। জবাবে শ্রীলঙ্কা করে ৫০৬ রান করে। অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজ ১৪৫ রানে অপরাজিত ছিলেন। আর চান্দিমাল করেন ১২৪ রান।

বাংলাদেশ পেছনে ছিল ১৪১ রানে। জবাবে শেষ বিকালে খেলতে নেমে সেই প্রথম ইনিংসের পুনরাবৃত্তি। ২৩ রানে নেই চার উইকেট! এই ধাক্কা আর কাটিয়ে উঠতে পারেনি বাংলাদেশ। ১৬৯ রানে অলআউট হয় মুমিনুলরা। বাংলাদেশের বিপক্ষে এই জয়ের ফলে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শ্রীলঙ্কার অর্জন দাঁড়িয়েছে ৪০ পয়েন্ট। ১৬ পয়েন্ট নিয়ে ৯ দলের টুর্নামেন্টে ৮ নম্বরে অবস্থান বাংলাদেশ দলের।

 

ঢাকা/ফাহিম