কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচিতে নেই
খালেদা জিয়ার জন্য দোয়া মাহফিলও নেই চট্টগ্রাম দ. জেলা বিএনপির

বাংলাদেশ মেইল ::

সারাদেশের বিভাগীয় শহরে গ্যাসসহ দ্রব্য মুল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশের ডাক দেয় জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। সেই হিসেবে ১১ ই জুন চট্টগ্রাম মহানগর ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপি পৃথক পৃথকভাবে কেন্দ্র ঘোষিত  কর্মসূচি পালন করে। কিন্তু কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায় নি চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপিকে।

অসুস্থ অবস্থায় চিকিৎসাধীন দলের চেয়ারম্যান বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতার জন্য দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল। কিন্তু দোয়া মাহফিল আয়োজনেও নেই বিএনপির চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা। এই নিয়ে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে তৃণমূলে।

শনিবার দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সুফিয়ান যোগ দেন মহানগর বিএনপির সমাবেশে । রবিবার  ( ১২ ই জুন) অনুষ্ঠানে চেহারা দেখাতে গিয়ে তোপের মুখে পড়েন দলের নেতাকর্মীদের।

দলের কোন কর্মসূচিতে সক্রিয় দেখা যাচ্ছে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপিকে। এর আগে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র উদ্দ্যেগে অনুষ্ঠিত রেলওয়ে স্টেশন চত্বরের সমাবেশেও যোগ দেয় নি দক্ষিণ জেলা বিএনপি নেতা কর্মীরা। দলের নেতাকর্মীরা অংশ না নিলেও মঞ্চে বক্তব্য দিয়ে নিজের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক  আবু সুফিয়ান।

জানা যায়, রেলওয়ে স্টেশন চত্বরের সেই সমাবেশে দক্ষিণ জেলা থেকে নেতাকর্মীদের  কোন অংশগ্রহণ না থাকার কারনে ক্ষোভ করেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির নেতারা। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে অভিযোগও করেন নেতারা। অভিযোগ যায় কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীমের কাছেও।

অভিযোগের পর একসাথে দক্ষিণ জেলা বিএনপিকে কোন অনুষ্ঠানে না রেখে, পৃথক ভাবে দলের কর্মসূচি পালনের নির্দেশ দেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় নি। পরের  কর্মসূচিগুলোতে দক্ষিণ জেলা বিএনপির কোন আয়োজনই ছিল না।

দলের ঘনিষ্ঠ সুত্রমতে, ‘ দক্ষিণ জেলার অধিকাংশ উপজেলার কমিটিতে ত্যাগীদের বাদ দিয়ে পকেট কমিটি দেয়া, পদের বিনিময়ে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ, আনোয়ারা উপজেলায় বিতর্কিত আহবায়ক  কমিটি গঠন, সাতকানিয়া উপজেলা ও পৌর বিএনপির আহবায়ক কমিটিতে অপরাধীদের পুনর্বাসনসহ নানা অভিযোগে তৃণমূলে গ্রহনযোগ্যতা হারিয়েছেন জেলার আহবায়ক আবু সুফিয়ান, সদস্য সচিব মোস্তাক আহমেদ। সে কারনে দক্ষিণ জেলায় পৃথক কোন কর্মসূচি দেবার সক্ষমতা নেই আহবায়ক কমিটির। ‘

দক্ষিণ জেলা যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদল,মহিলা দল- বিএনপির সহযোগী সংগঠনের সাথেও দুরত্ব বেড়েছে আহবায়ক ও সদস্য সচিবের। নানা অনিয়মের অভিযোগে দক্ষিণ জেলার আহবায়ক কমিটির বেশির ভাগ সদস্য আহবায়ক, সদস্য সচিবের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে ৷

তবে, দক্ষিণ জেলা  বিএনপির কোন কর্মসূচি না থাকলেও দক্ষিণ জেলা যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল নেতাকর্মীরা  বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতার জন্য দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে। দোয়া মাহফিল শেষে নেতারা চেয়ারপারসনের অসুস্থতায় দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র কোন কর্মসূচি নেই -এমন অভিযোগ করেছেন কেন্দ্রে।

জানা যায়, আবু সুফিয়ানকে প্রধান করে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির ৬৫ সদস্যের নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল ২০১৯ সালের অক্টোবরে। আহবায়ক কমিটি ঘোষণা  তিন মাসের মধ্যে সব উপজেলা কমিটি করার কথা থাকলেও পার করেছে প্রায় তিন বছর। আহবায়ক কমিটি ঘোষণার সময় আবু সুফিয়ান একই সাথে  চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ছিলেন।  গত সংসদ নির্বাচনে তিনি চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) সংসদীয় আসন থেকে দলের প্রার্থী হয়েছিলেন।

দলের বিভিন্ন সুত্রমতে, সভাপতি হতে চাইবেন না এমন নেতা হিসেবে দক্ষিণ জেলায় আহবায়ক কমিটির আহবায়ক করা হয়েছিল তাকে। কিন্তু  প্রায় দেড় বছরের সাংগঠনিক নিষ্ক্রিয়তা ও কমিটি বাণিজ্যে দ্বিধাবিভক্ত দক্ষিণ জেলা বিএনপির সংকট এখন পৌঁছেছে চরমে।

এই বিষয়ে জানতে দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মোস্তাক আহমেদের মুঠোফোনে তাকে পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সুফিয়ান গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন ‘ দক্ষিণ জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে  শিগগিরই বড় করে কর্মসূচি দেয়া করা হবে৷ প্রশাসনের  অনুমতি না পাবার কারনে এতদিন কোন পৃথক কর্মসূচী দেয়া যায় নি। ‘

একটি গণমাধ্যমে আবু সুফিয়ানের এমন বক্তব্য পড়ে হাস্যকর করছেন নেতাকর্মীরা। নেতাকর্মীদের বলতে শোনা যায় ‘ সেটা হয়তো দলের চেয়ারম্যানের জেয়াফত হবে। বিক্ষোভ কর্মসূচি নয়৷ ‘

তৃণমূলের কেউ কেউ বলছেন,  ‘ ওনার দলের কর্মসূচি দেয়ার কি দরকার? নিজের  ছেলে মেয়ের বিয়ের আয়োজন করতে বলেন, গতবারের মতো ব্যাপক চাঁদা তুলতে পারবেন। ‘

প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালে সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরীকে সভাপতি ও শেখ মোহাম্মদ মহিউদ্দিনকে সাধারণ সম্পাদক করে দক্ষিণ জেলা বিএনপির কমিটি হয়েছিল। ২০১১ সালে কমিটি পুনর্গঠন করে গাজী শাহজাহান জুয়েলকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়।