রিহ্যাবে পাঠিয়ে সম্পদ লিখে নেওয়ার পরিকল্পনা
ষড়যন্ত্রের জাল ছিঁড়ে মুক্ত হলেন আইইউবি’র আইনের সেই ছাত্রী

মাদক মামলার আসামী  বাবা -ভাইয়ের হাতে নির্যাতিতা চট্টগ্রামের ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির  আইন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী ‘ আফসানা’কে ( ছদ্মনাম)  উদ্ধার করেছে পুলিশ। ৯ জুলাই শনিবার রাতে এগারোটায় চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমান বন্দরের ওয়াসরুম থেকে তাকে উদ্ধার করে এয়ারপোর্টের সিকিউরিটি বিভাগের কর্মী।

শনিবার সকালে সূকৌশলী ঢাকার একটি রিহ্যাব সেন্টারের কর্মীরা তাকে উঠিয়ে নিয়ে যায়। বিষয়টি জানাজানি হবার পর থেকে তৎপর হন ঢাকা ও চট্টগ্রামের বেশকিছু সাংবাদিক। সাংবাদিকতা মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে অবহিত করেন। সন্ধ্যা ছয়টায় ঢাকার আহসানিয়া মিশন তাকে ভর্তি করাতে অস্বীকৃতি জানান। তার ডোপ টেস্ট করে জানা যায় মেয়েটি মাদকাসক্ত নয়।

পরে আফসানা ( ছদ্ধনাম) তাকে নিয়ে ঢাকা বিমান বন্দর থেকে চট্টগ্রামের উদ্দ্যেশে রওনা দেন চট্টগ্রাম বিমান বন্দরে এসে পৌঁছুলে মেয়েটি কৌশলে ওয়াশরুমে লুকিয়ে যায়। বিমানের জনৈক যাত্রীর মোবাইল থেকে ভুক্তভোগী মেয়েটি এসএমপির এডিসি পশ্চিমকে কল করে তাকে উদ্ধার  করার আকুতি জানান। পুলিশ যথাসময়ে বিমানবন্দরে না পৌছুলেও সাংবাদিকরা বিমানবন্দরে গিয়ে ওয়াশরুম থেকে সিকিউরিটি, এবিপিএন সদস্যদের সহযোগিতায় উদ্ধার করেন।

এসময় ভুক্তভোগী আফসানা ( ছদ্মনাম)  জানান, মায়ের রেখে যাওয়া ফ্ল্যাট ও ফিক্সড ডিপোজিটের টাকা জোরপূর্বক লিখে নেবার তৎপরতা চালানো হচ্ছিল দীর্ঘ একমাস ধরে৷ মেয়েটি তাতে অস্বীকৃতি জানালে ধারাবাহিকভাবে নির্যাতন করতো তার দুইভাই, ফয়সাল ও ফারুক। মেয়েটি জানায়, তার বাবাসহ দুইভাইই বিভিন্ন মাদক মামলার আসামী। একমাস আগে  তাদের বিরুদ্ধে হালিশহর থানায় দুইটি অভিযোগ করেছিল ভুক্তভোগী। এর পরিপ্রেক্ষিতে  পুলিশ মেয়েটিকে তাদের বাসা থেকে উদ্ধার করে ভাড়া বাসায় উঠিয়ে দিয়েছিল। সেখান থেকে ঈদের কথা বলে কৌশলে তাকে বাসায় ফেরত নেয়া হয়।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী জানায়, ইয়াবা সংক্রান্ত মামলার কারনে পুরো পরিবার  বাড়ি,জায়গা সম্পদ বিক্রি করে  থাইল্যান্ড  পাড়ি জমানোর পরিকল্পনা করেছিল । কিন্তু তার পড়াশোনা শেষ না হওয়ায় মেয়েটি বিদেশ যেতে অস্বীকৃতি জানালে বিপত্তি বাঁধে৷

এদিকে শাহ আমানত বিমানবন্দর থেকে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে উদ্ধারের ঘন্টাখানেক পরে পতেঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কবির আহমেদ বিমানবন্দরে উপস্থিত হন। আইইউবি’র শিক্ষার্থীর অভিযোগ ও অভিভাবকদের বক্তব্য  শুনেন। পরে হালিশহর থানায় পাঠিয়ে দেয়া হয় তাদের৷

হালিশহর থানায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বক্তব্য রেকর্ড করা হয়। দুইপক্ষের বক্তব্য শুনে মধ্যরাতে ভুক্তভোগী মেয়েটিকে বাবা, ভাইদের কাছে না দিয়ে মেয়েটির ইচ্ছানুযায়ী বড় বোনের  জিম্মায় দেয়া হয়৷

হালিশহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জহির আহমেদ বলেন, এমন ঘটনার খবর পাবার পর দুপুর থেকে মেয়েটিকে উদ্ধারে তৎপর ছিল পুলিশ। হালিশহর কে ব্লকের বাসায় পুলিশ পাঠানো হয়। । মেয়েটি মাদকাসক্ত নয় সহপাঠীদের- এমন তথ্যের ভিত্তিতে পরিবারের অন্য সদস্যদের থানায় ডেকে আনা হয়েছিল। কিন্তু বাবা,ভাইরা লিগ্যাল গার্জিয়ান হবার কারণে এবং মেয়েটিকে খবর পাবার আগেই ঢাকায় নিয়ে যাবার কারনে তাকে তাৎক্ষণিকভাবে উদ্ধার করা যায় নি। ‘

এদিকে, ফেইজবুক গ্রুপে ভুক্তভোগীর মেসেজ পেয়ে তার সহপাঠীরা বিষয়টি চট্টগ্রামের এক সিনিয়র সাংবাদিককে অবহিত করেন।  পুরো বিষয়টি নজরে রাখছিলেন চট্টগ্রামের কয়েকজন সাংবাদিক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। প্রশাসনের সাথে  তাদের নিরবিচ্ছিন্ন যোগাযোগের কারণে তাকে পরিকল্পনা অনুযায়ী  রিহ্যাবে ভর্তি করাতে ব্যর্থ হয় বড়ভাই মোহাম্মদ ফয়সাল। এক পর্যায়ে ঢাকার মিরপুরের সেই রিহ্যাব সেন্টারে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে কৌশলে মেয়েটিকে নিয়ে সরে পড়েন  মোহাম্মদ ফয়সাল। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরামর্শ অনুযায়ী  মেয়েটিকে ডোপ টেস্ট করানো হয়। এবং মেয়েটি মাদকাসক্ত নয়- এমন লিখিত বক্তব্য, টেস্ট ফলাফল দেয়া হয় আহসানিয়া মিশন মাদকাসক্ত পুনর্বাসন কেন্দ্র থেকে।

এদিকে, ঈদের দিন বিবেচনায়  ভোররাত সাড়ে তিনটার দিকে, মেয়েটিকে তার বড়বোনের বাসায় রাখার সাময়িক সিদ্ধান্ত নেয়া হয় হালিশহর থানার পক্ষ থেকে। সিএমপির পশ্চিমের উর্ধতন কর্মকর্তাদের নির্দেশ অনুযায়ী মেয়েটিকে তার বাবা-ভাইয়ের বন্দিদশা থেকে উদ্ধার করা হয়৷। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে তার কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।