কারাবন্দী মানুষের ঈদ,স্বজনদের কাছে পাবার আকুতি

বাংলাদেশ মেইল ::

ঈদ যাত্রার ভোগান্তি মাড়িয়ে স্বজনদের কাছে ফিরছেন সারাদেশের অসংখ্য মানুষ। ঈদের আনন্দ পরিবারের সাথে ভাগ করে নেবার এমন ঐতিহ্যে ভাটা ফেলতে পারে নি একান্নবর্তী পরিবার ভাঙ্গার সংস্কৃতি। চাকরিজীবি, শ্রমিক,  কর্মজীবী নারী, পেশাজীবি  -সবার কাছেই ঈদ মানে দায়িত্বের কোলাহল থেকে দুরে অন্যরকম ছুটির আমেজ৷ চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে ঈদকে উপলক্ষ করে কারাবন্দী  স্বজনদের কাছে পেতে শেষমুহুর্তের চেষ্টা অব্যাহত রাখতে দেখা  গেছে অনেককে।

কেউ এসেছে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থেকে, কেউ বাঁশখালী, কক্সবাজারের মহেশখালী, কেউ আবার রাঙামাটির কাউখালী। গতকাল শুক্রবার দুপুরে চট্টগ্রাম কেন্ত্রীয় কারাগারের চিত্র এটি। এদিন বিভিন্ন মামলায় কারাভোগ করা ৩৫৮ জনের জামিন দিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। ঈদের মাঝখানে একদিন বাকী, জামিন পাওয়া আসামীদের কেউ কেউ খুশির আনন্দে কারাগার ছেড়েছেন। শুধু যে জামিন পাওয়া ব্যক্তিদের এগিয়ে নিতে তাদের স্বজনরা এখানে এসেছেন তা নয়,  কারাগারে থাকা প্রিয় মানুষটিকে দেখতেও এসেছেন কেউ কেউ। সঙ্গে এনেছিলেন নতুন জামা, পছন্দের খাবারও।

পাঁচ বছরের ছোট্ট শিশু ইরফানকে নিয়ে চট্টগ্রামের মিরসরাই থেকে এসেছেন গৃহবধূ রহিমা বেগম। তার স্বামী শাহেদ মোহাম্মদ রিয়াজ গেল ২ বছর অর্থ আত্মসাতের মামলায় জেলহাজতে। শুক্রবারই জামিন পেয়েছেন তিনি। তাই ছোট্ট ছেলেকে নিয়ে ট্রেনযোগে চট্টগ্রাম এসেছেন । আশা ফিরবেন স্বামী জামিন লাভের খুশি নিয়ে।

দুপুরে কারাগারের সামনে কথা হয় তার সাথে। তিনি জানিয়েছেন, অনেক চেষ্টার পর অবশেষে জামিন পাচ্ছেন তাঁর স্বামী তাই সন্তানকে নিয়ে এসেছেন এখানে।

বান্দরবানের থানচি থেকে একটি ব্যাগে নতুন জামা, ফজলে আম, রান্না করা গরুর মংসসহ এসেছেন ইমদাদুল হকের বাবা ইশতিয়াক হক। এক বছর আগে বন ও পরিবেশ আইনে  দায়ের করা মামলায় গেল ৮ মাস কারাগারে ইমদাদুল হক। দু’দিন পর কোরবানির ঈদ। তাই ছেলের কিছু পছন্দের খাবার ও নতুন জামা নিয়ে কারাগারে হাজির হয়েছেন তিনি।

ইশতিয়াক হক জানান, ছেলের সঙ্গে দেখা করতে পেরে খুব ভালো লাগছে। সেও খুব খুশি হয়েছে আমাকে দেখে।

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার দেওয়ান মোহাম্মদ তরিকুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে কারাগারে ৬ হাজারের বেশি বন্দি রয়েছে। এর মধ্যে নারী-পুরুষ এবং ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিও রয়েছেন। তবে তারা যেন ঈদের দিন ঈদ আনন্দ উদযাপন ও ভালো খাবার খেতে পারেন সেজন্য বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঈদুল আজহা উপলক্ষে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয়  কারাগারের ভেতরের প্রতিটি কক্ষ আসামিদের নিজ উদ্যোগে সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। প্রতিবারের মতো এবারও ঈদুল আজহার দিন কারাগারে থাকা বন্দিদের জন্য বিশেষ খাবারের আয়োজন করেছে চট্টগ্রাম কারা কর্তৃপক্ষ।

কারাগার কর্তৃপক্ষ জানায়, আগামী রোববার (১০ জুলাই) সকালে ঈদের নামাজের পর পর সেমাই, মুড়ির সঙ্গে দুপুর ও রাতে বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।দুপুরে পোলাও-মাংস, সালাদের সঙ্গে যারা গরুর মাংস না খান (অন্য ধর্মলম্বী) তাদের জন্য খাসির ব্যবস্থা করা হয়েছে।  রাতে ভাতের সঙ্গে ডাল আর রুই মাছ পরিবেশন করা হবে।