এবার ভুমি অধিগ্রহনের দুই কোটি ৪৯ লাখ টাকা হাতিয়ে নেবার চেস্টা

বাংলাদেশ মেইল::

চট্টগ্রামের ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় জাল আমমোক্তারনামা তৈরি করে ক্ষতিপুরনের  অর্থ আত্মসাতের চেষ্টাকালে এক দালালকে আটক করা হয়েছে। রবিবার বিকেলে জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখা থেকে শাহ আলম নামের এই দালালকে আটক করা হয় বলে জানা গেছে।

জেলা প্রশাসনে অধিগ্রহণ শাখার তথ্যমতে, মিরসরাই অর্থনৈতিক জোনের এল.এ মামলা নং ১৩/১৭-১৮, বিএস খতিয়ান: ৩৬৭, বিএস দাগ নং- ১০৮৭ম, দক্ষিণ মঘাদিয়ার অধিগ্রহণ করা জমির বিপরীতে জাল আমমোক্তার নামা তৈরি করে ক্ষতিপুরনের অর্থ সংগ্রহ করার চেষ্টা করছিলেন একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র।

মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলের অধিগ্রহণকৃত ৩.৫০ জমির বিপরীতে ২,৪৯,১৭,৬০২.৫০ ( দুই কোটি ঊনপঞ্চাশ লাখ সতের হাজার ছয়শত দুই টাকা পঞ্চাশ পয়সা) তোলার জন্য ভুমি মালিকের কাছে থেকে ‘ পাওয়ার অব এটর্নি ‘ নিয়ে অধিগ্রহণ শাখায় একটি আবেদন জমা দেয় শাহআলম।  ভূমির প্রকৃত মালিক মৃত খায়রুল বশর। মৃত্যুর পর খায়রুল বশরের স্ত্রী মোছাম্ম আর জাহান ও দুই পুত্র জাফর উল্লাহ ও সাইফুল ইসলাম, এক কণ্যা হাসনা আক্তার জমিটির মুল ওয়ারিশ।

কিন্তু আবেদনকারী শাহ আলম ভুমিটির রেকর্ডীয় মালিক খায়রুল বশরের ওয়ারিশ মোছাম্মৎ আর জাহান রীনা, সাইফুল ইসলাম, শামসুর নাহারের কাছ থেকে রেজিস্ট্রি আমমোক্তার নামা নিয়েছেন বলে দাবি করেন। আমমোক্তারনামা নং ২৩৬৪, তাং ০৮/০৯/২০২১;ইং মূলে বি.এস ১০৮৭ দাগে ৩.৫০ একর জমির ক্ষতিপূরনের টাকা উত্তোলন করার জন্য  আবেদন করেন।

ক্ষতিপূরণ গ্রহণের একাধিক আবেদন পাওয়ায় অধিগ্রহণ শাখার  ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা ও সার্ভেয়ার আমমোক্তারের বিষয়ে সত্যতা নিশ্চিত হওয়ার জন্য যাচাই বাছাই  করে দেখেন আমমোক্তারনামাটি জাল ।

যাচাই বাছাইয়ের আমমোক্তার দলিলটি সন্দেহজনক প্রতীয়মান হলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(এল.এ.) কে অবহিত করেন ভূমি অধিগ্রহণ শাখার কর্মকর্তারা।  শাহ আলম সহ অপর আবেদনকারী  সাইফুল ইসলাম (যিনি শাহ আলমের দাখিলকৃত আমমোক্তার) দলিলের একজন আমমোক্তার দাতা বক্তব্য গ্রহণ করে নিশ্চিত হন এটি জাল আমমোক্তারনামা। মুল ওয়ারিশদের পক্ষে  সাইফুল ইসলাম আমমোক্তার নিযুক্ত সংক্রান্ত বিষয়ে অস্বীকার করেন এবং দলিলটি জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে সৃজিত মর্মে দাবী করেন।

অধিকতর তদন্তের জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক অপর আবেদনকারী শামসুননাহার এবং তার মাতা মোছাম্মৎ আর জাহান রীনার সাথে ফোনে কথা বললে তাদের কাছ থেকে জানা যায় খায়রুল বশরের মোট ০৫ (পাঁচ) জন ওয়ারিশ। তাদের সম্মিলিত বক্তব্যে দলিলটি জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে সৃজিত তা স্পষ্ট হয়। নিশ্চিত হবার পরে এল.এ. শাখার সার্ভেয়ার আব্দুল মোমেন,  অফিস সহকারী মোহাম্মদ শোয়েব ও এল.এ.ও এহসান মুরাদ  হাতেনাতে জালিয়াত চক্রের এই সদস্যকে আটক করেন।পরবর্তীতে জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় পুলিশে সোপর্দ করা হয়।

অতিরিক্তি জেলা প্রশাসক (এল.এ.)  মাসুদ কামাল জানান, এর আগে ভিন্ন একটি প্রতারক চক্রকে জাল ‘পাওয়ার অব এটর্নি ‘ ব্যবহার করে ভূমি অধিগ্রহণের দুই কোটি ৮৭ লক্ষ টাকার চেকসহ আটক করা হয়েছিল। এরপর থেকে ‘পাওয়ার অব এটর্নি ‘ নিয়ে কেউ আবেদন করলে নিবিড় পর্যবেক্ষণ করার নির্দেশনা রয়েছে। ‘

মাসুদ কামাল বলেন, আটক হওয়া প্রতারক শাহ আলম জানিয়েছিল জমির মুল মালিক আমেরিকায় বসবাস করে। এ বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ হলে কৌশলে দুই ঘন্টা সময় নেয়া হয় শাহ আলমের কাছ থেকে। এই সময়ের মধ্যে ভূমি মালিকদের সাথে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, তারা কাউকে পাওয়ার দেন নি। ‘

অতিরিক্তি জেলা প্রশাসক (এল.এ.)  মাসুদ কামাল জানান, আটক হওয়া শাহ আলম জাল আমমোক্তারনামার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। শাহ আলম এই দালাল চক্রের আরও দুই জনের নাম বলেছে। এই বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। ‘

প্রসঙ্গত, এরআগে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় ‘জহুরা বেগম’ নামের এক মহিলাকে ব্যবহার করে ২ কোটি ৮৭ লক্ষ টাকার ক্ষতিপূরণের  চেক সংগ্রহ করে ব্যাংকে জমা দেবার সময় ধরা পড়েছিল আরেকটি চক্র। সেই ঘটনায় আটক হবার পরে ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে এলএ শাখর সার্ভেয়ার খাজা উদ্দিন, বাঁশখালী ভূমি অফিসের চেইনম্যান নিজাম উদ্দিন, কথিত সাংবাদিক নিজাম উদ্দিন খানের নাম বলে দেন ‘জহুরা বেগম’। সেই আলোচিত জালিয়াতির চেষ্টায় জহুরাসহ তিনজন আটক হলেও, ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন নিজাম উদ্দিন খান। আলোচিত জহুরা কেইসের পর আবারও নতুন চক্র আটক করেছে ভূমি অধিগ্রহণ শাখা।

বিএম/ভূমি