মাংশ সংরক্ষণে জটিলতা
বিদ্যুৎ বিড়ম্বনায় ঈদের দিনে দূর্ভোগ

বাংলাদেশ মেইল ::

বিদ্যুৎ না থাকা, থেমে থেমে বিদ্যুৎ এসে আবার চলে যাওয়া এমন বিড়ম্বনায় কোরবানি ঈদ করেছেন চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলার সাধারন মানুষ। পল্লী বিদ্যুৎ এলাকায় রবিবার (১০ জুলাই)  সকাল থেকেই নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হয়েছে।

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি, হাটহাজারী, রাউজান রাঙ্গুনিয়া, আনোয়ারা, বোয়ালখালী, পটিয়া -ঈদের দিনে কোনখানেই স্বস্তি ছিলো না। অনেক জায়গায় কোরবানির মাংশ সংরক্ষণে ব্যবহৃত ফ্রিজ নস্ট হবার ঘটনাও ঘটেছে। ফলে কোরবানির মাংস সংরক্ষণ করার জটিলতা নিয়ে ঈদের দিন কাটাতে হয়েছে সাধারণ মানুষকে।

ঈদের দিনে বিদ্যুতের ভেল্কিবাজিতে দুর্ভোগের মাত্রা চরমে পৌঁছেছে। শুধু দিনের বেলায় নয়, গভীর রাতেও ছিলো  বিদ্যুতের এমন লুকোচুরি।

যদিও পিডিবি কর্মকর্তারা বলছেন— গ্যাস সংকটে উৎপাদন স্বল্পতা, ভ্যাপসা গরমে চাহিদা বৃদ্ধি ও জাতীয় গ্রিড থেকে সরবরাহ স্বল্পতার কারণে এমন সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।

এ বিষয়ে পিডিবি চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী এম রেজাউল করিম জানান, কয়েকদিন ধরে সারাদেশেই লোডশেডিং শুরু হয়েছে। এটা শুধু চট্টগ্রামের সমস্যা নয়। এটা জাতীয় পর্যায়েও একই অবস্থা। চট্টগ্রামের কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রয়েছে। এখন চট্টগ্রামে ৩শ থেকে সাড়ে ৩শ মেগাওয়াট লোডশেডিং চলছে। পিক আওয়ারে এখন চট্টগ্রামের বিদ্যুতের চাহিদা ১৩শ মেগাওয়াটের মতো।

তিনি সবাইকে বিদ্যুৎ ব্যবহারে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, বড় বড় শপিং মলগুলোতে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত যেভাবে সেন্ট্রাল এসি চালিয়ে রাখে এবং হোটেল, রেস্টুরেন্ট ও মার্কেট গুলোতে যেভাবে দিনে-রাতে অপ্রয়োজনীয় বাতি জ্বালিয়ে রাখে এই মুহূর্তে সেগুলো বন্ধ করলে অনেক উপকার পাওয়া যাবে। যার যার অবস্থা থেকে যদি আমরা বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হই তাহলে আমাদের অনেক বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে। ‘

তবে ঈদের দিনে বিদ্যুৎ এর এমন ভেল্কিবাজিকে মেনে নিতে পারছেন না গ্রামাঞ্চলের মানুষ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ক্ষোভ ঝেড়েছেন অনেকেই।

হাটহাজারী মনিয়া পুকুর এলাকার আসলাম চোধুরী বলেন, ‘ বিদ্যুৎ এর সংকট কখনোই দেখি নাই। শান্তিমত ঈদটাও করতে পারলাম না। অথচ ঈদ উপলক্ষে  অধিকাংশ মার্কেট, শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। ‘

নাজিরহাট বাজারের আব্দুস সালাম বলেন, ‘মাংশ নিয়ে এখানে ওখানে ছুটোছুটি করেছি সারাদিন। কারেন্ট এই আসে এই যায়। ‘

অবশ্য সংকট কাটাতে ঈদে দেশজুড়ে  আলোকসজ্জা বন্ধ রাখার নির্দেশ জারি করা হয়েছিল। পিডিবি’র কর্মকর্তারা বলছেন,  লোডশেডিং স্বাভাবিক হতে আরও আড়াই মাস সময় লাগবে। সেপ্টেম্বর নাগাদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে। কারণ ওই সময় বেশ কয়েকটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হবে।

জানা গেছে, বাংলাদেশে উৎপাদিত মোট বিদ্যুতের সিংহভাগ তৈরি হয় লিকুইফাইড ন্যাচারাল গ্যাস (এলএনজি) থেকে। যা মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের প্রায় ৬২.৯%।  বর্তমানে বিশ্বে লিকুইফাইড ন্যাচারাল গ্যাসের বাজার বেশ উত্তাল। পিডিবি বলছে, এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) আমদানি কমে যাওয়াতে সারাদেশে গ্যাসের সরবরাহ কমে যাওয়ার কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হচ্ছে। এতে বাধ্য হয়েই লোডশেডিং করছে সরকারি বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানটি।

এছাড়া, ২০২১ সালের শেষের দিক থেকে এলএনজির দাম বিশ্ব বাজারে বারবার নতুন রেকর্ড গড়েছে, যার জন্য দায়ী ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসন।