ছেলে চসিকের ঠিকাদার
চসিকের প্রধান প্রকৌশলী গাড়ি কিনে দিয়েছেন ছেলেকে

বাংলাদেশ মেইল ::

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে উঠা বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে আসা তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি তাদের অনুসন্ধান শেষ করে ঢাকায় ফিরেছেন। তদন্তকারী দলের সামনে হাজির হন নি ইতিপূর্বে প্রধান প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করা ব্যক্তি ‘ জামাল হোসেন। ‘

অনুসন্ধানে জানা যায়, জামাল হোসেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন কার্যালয়ে তদন্ত কমিটির সামনে সাক্ষ্য দেবার বিষয়ে অনীহা প্রকাশ করেছেন, নিরাপত্তার শঙ্কা প্রকাশ করে। এই কারণে তাকে ঢাকায় মন্ত্রণালয়ে তদন্ত কমিটির সদস্যদের সামনে সাক্ষ্য দেবার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

এদিকে, সোমবার তদন্ত কমিটির সদস্যরা তথ্য সংগ্রহ, নথি নীরিক্ষা করার কথা থাকলেও, শেষ পর্যন্ত তাদের ফিরতে হয়েছে ঢাকায়। অভিযোগ যার বিরুদ্ধে- সেই প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম সোমবার ঢাকায় রওনা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। সুত্রমতে, নির্বাহী প্রকৌশলী  জসিম উদ্দিন প্রধান প্রকৌশলীর সাথে ঢাকায় গেছেন। তদন্ত প্রতিবেদন যাতে প্রধান প্রকৌশলীর পক্ষে যায়।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব পর্যায়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন অনিয়ম ও কর্মকর্তাদের দূর্নীতির বিষয়টি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ ও তথ্য সংগ্রহ  করছে মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি, নিয়োগ  টেন্ডার সংক্রান্ত অনিয়ম, প্রকিউরমেন্টে দূর্নীতির নেপথ্যে কাজ করা সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর হবার নির্দেশনা দিয়েছেন এলজিআরডি মন্ত্রী।

তবে চসিকের প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা যায় তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়ে ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন প্রধান প্রকৌশলী। তদন্ত কমিটির সামনে অভিযোগকারীর হাজির না হওয়া, তদন্তের নির্ধারিত সময়সূচি পরিবর্তন -এসব কারণে তদন্তের স্বচ্ছতা নিয়ে সন্দেহ সৃস্টি করেছে।

তদন্ত কমিটির এক সদস্য না প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, তদন্ত প্রক্রিয়া কোন ধরনের তদবিরে গতি হারাবে না। তদন্ত কমিটির সদস্যদের কাছে প্রধান প্রকৌশলী তার ছেলের ঠিকাদারি সংক্রান্ত অভিযোগের জবাবে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়েছেন। তিনি দাবি করেছেন সন্তান আদনানের সাথে তার সম্পর্ক নেই। প্রধান প্রকৌশলীর প্রথম স্ত্রীর সন্তান সে। বর্তমানে সন্তানের সাথে তার যোগাযোগ নেই।

তবে অনুসন্ধানে জানা গেছে চট্টগ্রাম শহরের  একটি কার সেন্টার থেকে প্রধান প্রকৌশলী তার ছেলে আদনান রফিককে  ‘সেলুন কার ‘ কিনে দিয়েছিলেন । ১৫০০ সিসির গাড়ির নথিপত্র প্রতিবেদকের হাতে এসেছে৷ নথি অনুযায়ী গাড়িটি ক্রয় করা হয়েছে মাস খানেক আগে,  চলতি মাসের শুরুতে ২০১৭ মডেল এবং ১৫০০ সিসির গাড়িটির রেজিষ্ট্রেশন ( চট্ট-গ ১৪-০৯৫৫) করা হয়েছে । কার সেন্টারটির কর্মচারীরাও সেখানে রফিকুল ইসলামের উপস্থিতি নিশ্চিত করেছেন। সাতাশ বছর বয়সী ছেলে আদনান রফিক নগরীর খুলশী থানাধীন  শান্তিধারা আবাসিক এলাকায় বসবাস করছেন।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের  প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামের  বিরুদ্ধে দুদকে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ করেন মো. জামাল হোসেন নামের এক ব্যক্তি। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে ছয়মাস পর  তদন্ত কমিটি করেন স্থানীয় সরকার বিভাগ।

জামাল হোসেনের অভিযোগে বলা হয় , চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামের ছেলে আদনান রফিকের রয়েছে মেসার্স মিয়াজি কনস্ট্রাকশন নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি গত ছয় বছরে সিটি করপোরেশনের প্রায় ১৯ কোটি টাকার কাজ করেছে । এভাবে সরকারি চাকরিজীবী বাবার প্রতিষ্ঠানে ছেলের ঠিকাদারি করার বিষয়টিকে চাকরি  বিধি ভঙ্গ ও স্বার্থের সংঘাত হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। নথিপত্র অনুযায়ী, আদনান রফিকের বর্তমান বয়স প্রায় ২৭ বছর। অর্থাৎ ২১ বছর বয়স থেকে ঠিকাদারি ব্যবসা করছেন তিনি।

২০১৯ সালে তৎকালীন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী) রফিকুল ইসলাম মেসার্স মিয়াজি কনস্ট্রাকশনকে একটি প্রত্যয়নপত্র দেন। এতে বলা হয়, মেসার্স মিয়াজি কনস্ট্রাকশন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের অধীনে ছয়টি উন্নয়নকাজ সন্তোষজনকভাবে শেষ করেছে। এতে ব্যয় হয়েছে ১৯ কোটি ৪৬ লাখ টাকা।

ওই প্রত্যয়নপত্র অনুযায়ী, মেসার্স মিয়াজি কনস্ট্রাকশন লিমিটেড ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১২ লাখ ৬০ হাজার টাকায় ১০ নম্বর ওয়ার্ডের আমানত উল্লাহ শাহ পাড়া সড়কের উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করেছে। এছাড়া ৪ কোটি ৬২ লাখ টাকায় ৯ নম্বর ওয়ার্ডের রেলওয়ে আকবর শাহ সোসাইটি রোড, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ খুলশীর আবাসিক এলাকার বাই লেনের উন্নয়নে ৪ কোটি ৭ লাখ টাকার কাজ, ৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের লাল মিঞা ছড়ার প্রতিরোধ দেয়ালের নির্মাণকাজ, ৭৩ লাখ ২৮ হাজার টাকা ব্যয়ে কর্ণফুলী আবাসিক এলাকায় নালার কাজ এবং ৯ নম্বর ওয়ার্ডে ইগল স্টার সড়কের উন্নয়নে সাড়ে ৪ কোটি টাকার কাজ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

এসব বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামের সাথে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করা হলে, তার সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয় নি।