সবখানেই টাকার ফাঁদ
দালালদের আস্তাকুঁড়ে পরিণত হয়েছে ‘চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড’

প্রিন্স আচার্য ::

চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড কার্যালয় যেন দালালদের আস্তাকুঁড়ে পরিণত হয়েছে। শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে মার্কশিট উঠানো , দাপ্তরিক  ভুল সংশোধন সব ক্ষেত্রেই  শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র।চক্রটির দৌরাত্ম্যে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে চলছে নিরব চাঁদাবাজী।

সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪র্থ বর্ষের ছাত্র ও টিআইবি ইয়েস মেম্বার মোহাম্মদ রাসেলও এমন অভিনব চাঁদাবাজীর শিকার হয়েছেন।

তিনি বলেন,  আমার এক ভাগ্নীর হারিয়ে ফেলা রেজিস্ট্রেশন কার্ড আর প্রবেশপত্র তুলতে গিয়েছিলাম। নিয়মানুযায়ী  এবিষয়ে চকবাজার থানায় জিডি করেছি। ( জিডিনাম্বার ৭৫৬)। শিক্ষাবোর্ডে গিয়ে দেখি  হেল্প ডেস্ক আছে, কিন্তু সহযোগিতা করার জন্য কোন কর্মকর্তা  নেই। দায়িত্ব পালনরত আনসার সদস্যরাও কোন তথ্য দেয়না। জিজ্ঞেস করে কিসের জন্য এসেছেন। তারপর সমস্যার কথা বললে (একটা নাম্বার ধরিয়ে দিয়ে বলেন ‘এই নাম্বারে কল দেন’। ‘

তাদের দেয়া সেই নাম্বারে কল দিলে অপরপ্রান্ত থেকে বলে কাজটা দ্রুত করে দিবে।  তবে তাদের ৫ হাজার টাকা দিতে হবে।

রাসেল জানান, ‘ শিক্ষাবোর্ড ভবনের উপরে গিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জিজ্ঞেস করলে একেকজন একেক ধরনের তথ্য দিচ্ছেন। কেউ বলে চার তলায় যান, সেখানে গেলে বলে পাঁচ তলায় যেতে হবে। আবার কেউ কেউ পাঠিয়ে দিচ্ছেন  ৮ তলায়।’

এভাবেই ঘুরতে ঘুরতে দেখা যায়  হঠাৎ দালাল চক্রের  একজন জিজ্ঞেস করে ‘ কি জন্য এসেছেন?

জানান,  তিনি কাজটি করে দেবেন। তবে,  টাকা একটু  বেশি দিতে হবে।  সব কাজ তিনি ঝামেলা ছাড়াই করে দেবেন ।

এভাবে সেবা নিতে আসা শিক্ষার্থী, তাদেন অভিভাবকদের  সঠিক তথ্য দিয়ে দালালদের কাছেই সোপর্দ করে দিচ্ছেন সংস্থাটির কর্মকর্তা কর্মচারীরা।  তাদের মাধ্যমে  কাজ নিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা। দেখার যেন কেউই নেই।

ভুক্তভোগী রাসেল বলেন, আমার কাছে এক দালাল চাইলো ৩০০০ টাকা।  অনেক দৌড়াদৌড়ির পর দাপ্তরিক খরচ হিসেবে ৫০০ টাকা জমা দিয়ে আসছি। আমি জানিনা কাজটা কতোদিনে হয়। কারণ তাদের মতিগতি দেখে মনে হয়েছে তারা দালালদের দেওয়া কাজগুলোকেই গুরুত্ব দেয়। আমাকে বলেছে একমাসের আগে যেনো যোগাযোগ না করি।’

রাসেল  বলেন,  অবাক করা কান্ড হারানো বিজ্ঞপ্তি পত্রিকায় প্রকাশ করার ক্ষেত্রেও চলছে অনিয়ম।  দৈনিক দেশের কথায় হারানো বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে । একটা ছোট বিজ্ঞপ্তি দিতে ওই পত্রিকার সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে  ‘ আমার কাছ থেকে ৬০০টাকা নিয়েছেন’।

শুধু শিক্ষার্থী কিংবা অভিভাবকদের কাছ থেকে নয় পরিদর্শনের নামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে আদায় করছেন মোটা অংকের টাকা বিদ্যালয় পরিদর্শকরা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন, পাঠদান, একাডেমিক স্বীকৃতি, অতিরিক্ত শ্রেণি খোলা যে কোন বিষয়ে পরিদর্শনে গিয়ে ২০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করছেন এক শ্রেণীর দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা। টাকা না দিলেন হুমকি ও চরম দূর্ব্যবহারের স্বীকার হচ্ছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা। চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের আওতাধীন একাধিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রতিবেদকের কাছে বিদ্যালয় পরিদর্শকের দূর্ব্যবহার ও চাঁদা আদায়ের কথা স্বীকার করেছেন।

সেবাগ্রহীতাদের হয়রানি, ঘুষ আদায়সহ দালাল চক্রের দৌরাত্মের বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে ফোন দেয়া হলেও তিনি সাড়া দেন নি।