গার্মেন্টস স্যাম্পলের নামে অর্থ পাচার
পোশাক রপ্তানির নামে ৩০০ কোটি টাকা পাচার

নিজস্ব প্রতিবেদক :::

চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পোশাক রপ্তানির আড়ালে জালিয়াতির মাধ্যমে ৩০০ কোটি টাকা পাচারের চাঞ্চল্যকর তথ্য মিলেছে  ঢাকার ১০ গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। ১০ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান বিগত সময়ে ১,২৩৪ টি পণ্যচালানে এমন জালিয়াতি করেছে।

সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে গণমাধ্যমকে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক বশির আহমেদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর জানান, ব্যাপক অনুসন্ধ্যানে টাকা পাচারের বিষয়টি প্রমাণ পেয়েছে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। এসব কারসাজির সঙ্গে জড়িত আছে চট্টগ্রামের বেশ কয়েকটি সিএন্ডএফ এজেন্ট।

দশ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের বিল অফ এক্সপোর্ট (রপ্তানি বিল) এবং ইএক্সপির মধ্যে মিল খুঁজে না পাওয়ায় তদন্ত পরিচালনা করে সিআইআইডি। ওই তদন্তে জালিয়াতির বিষয়টি উঠে আসে। তৈরি পোশাক রপ্তানির নামে ১০ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান বিদেশে ৩০০ কোটি টাকা পাচার এমন অভিযোগের প্রমান পেয়েছে   শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর (সিআইআইডি)।

অর্থ পাচারে অভিযুক্ত কোম্পানিগুলো হলো- প্রজ্ঞা ফ্যাশন লিমিটেড, ফ্যাশন ট্রেড, এমডিএস ফ্যাশন, হংকং ফ্যাশনস লিমিটেড, থ্রি-স্টার ট্রেডিং, ফরচুন ফ্যাশন, পিক্সি নিটওয়্যারস লিমিটেড, স্টাইলাইজ বিডি লিমিটেড এবং ইডেন স্টাইল টেক্স।

এই ১০ রপ্তানিকারকের বিল অফ এক্সপোর্ট (রপ্তানি বিল) এবং ইএক্সপির মধ্যে মিল খুঁজে না পাওয়ায় তদন্ত পরিচালনা করে সিআইআইডি। ওই তদন্তে জালিয়াতির বিষয়টি উঠে আসে বলে আজ (৪ সেপ্টেম্বর) সিআইআইডি প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

ইএক্সপি হচ্ছে ‘এক্সপোর্ট পারমিশন’ বা রপ্তানির অনুমতি, যা অনুমোদিত ডিলার ব্যাংক জারি করে থাকে।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো বিল অব এক্সপোর্ট জালিয়াতিপূর্বক অন্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের ইএক্সপি ব্যবহার করে পণ্য রপ্তানি করেছে।

বর্তমানে চলমান অনিয়মের তদন্তকালে ১০ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান বিগত সময়ে ১,২৩৪টি পণ্যচালানে এমন জালিয়াতি করেছে বলে জানা গেছে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, রপ্তানি সম্পন্ন ১,২৩৪টি চালানের বিপরীতে পণ্যের পরিমাণ ৯,১২১ মেট্রিক টন, যার প্রত্যাবাসনযোগ্য বৈদেশিক মুদ্রার সম্ভাব্য পরিমাণ ৩,৫৩,৬৬,৯১৮ মার্কিন ডলার (৩০০ কোটি টাকা প্রায়)।

সিআইআইডি’র বিজ্ঞতিতে বলা হয়েছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে রপ্তানিকৃত পণ্য হলো টি-শার্ট; রপ্তানির সময় প্রতি পিসে টি-শার্টের ওজন দেখানো হয়েছে ৫০০/৮০০/১০০০ গ্রাম বা তারও বেশি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে প্রতি কেজি নিট ফেব্রিক্স দিয়ে কমপক্ষে ৩ থেকে ৬টি লং স্লিভ (ফুল হাতা) এল সাইজের টি-শার্ট হয়ে থাকে।  প্রতিটি টি-শার্টের গড় ওজন ন্যূনতম ২৫০ গ্রাম ধরে রপ্তানিকৃত টি-শার্টের সংখ্যা হিসাব করা হয়েছে। তাছাড়া কিছু কিছু পণ্যচালানে রপ্তানি পণ্যের মূল্য খুবই কম ঘোষণা করা হয়েছে।

প্রতিষ্ঠানগুলোর সংশ্লিষ্ট দলিলাদি পর্যালোচনা করে আরও দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানসমূহ টি-শার্ট, টপস, লেডিস ড্রেস, ট্রাউজার, বেবি সেট, পোলো শার্ট, প্রভৃতি পণ্য সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, কাতার, সৌদি আরব, নাইজেরিয়া প্রভৃতি দেশে জালিয়াতির মাধ্যমে রপ্তানি দেখিয়ে অর্থ পাচার করেছে।

এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা হলো- এমএজে শিপিং কর্পোরেশন, এএন্ডজে ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, জিআর ট্রেডিং কর্পোরেশন, এনএইচ কর্পোরেশন, কেআরএস সিঅ্যান্ডএফ লিমিটেড, প্যান বেঙ্গল এজেন্সি, পরাগ এসএমএস লিমিটেড, রিয়াঙ্কা ইন্টারন্যাশনাল এবং মেসার্স একে এন্টারপ্রাইজ।

কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর ঢাকার যুগ্ম পরিচালক মো. শামসুল আরেফিন খান বলেন, ‘ সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এবং রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর পারস্পারিক সহযোগিতা ও যোগসাজশে জাল-জালিয়াতির এ ঘটনা ঘটেছে। প্রতিষ্ঠাগুলোর বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। ‘