ভুজপুরে গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ

ফটিকছড়ি প্রতিনিধি :::

ফটিকছড়ির ভুজপুরে নাহিদা আক্তার ঋতিকা (১৮) নামে এক গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে উপজেলার ভুজপুর থানাধীন দাঁতমারা ইউনিয়নের হোসইন্যারখীল গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নাহিদার নন্নসের (স্বামীর বোন) দাবী নাহিদা আত্মহত্যা করেছে। তবে তাদের এ দাবী মানতে রাজি নয় নাহিদার পরিবার।

নিহত নাহিদার বাবার বাড়ী ফেনীর ছাগলনাইয়া থানার দক্ষিণ বল্লবপুর গ্রামে। নাহিদার স্বামী মিজানুর রহমান বাবলু মালেয়শিয়া প্রবাসী। তিনবোন এক ভাইয়ের মধ্যে নাহিদা দ্বীতিয়।

নাহিদার মা জেসমিন আক্তার জানান, দুই বছর আগে প্রবাসী মিজানুর রহমানের সাথে নাহিদার বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে শশুড় বাড়ীর লোকজন নানা অজুহাতে নাহিদাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করত। এ নিয়ে কয়েকদফা সালিশী বৈঠকও হয়। পরে নাহিদার স্বামী নাহিদাকে ফটিকছড়ির ভুজপুর থানাধীন দাঁতমারা ইউনিয়নের হোসইন্যারখীল গ্রামে নিয়ে আসে। সেখানে মিজানের ভগ্নিপতি চা দোকানদার সামশুর তত্বাবধানে সিঙ্গাপুরী নামে এক লোকের বাড়ীতে ভাড়া বাসা নিয়ে দেন। সেখানে মুসাইদা জান্নাত মুশকান নামের ৭ মাস বয়সী এক কন্যা সন্তান নিয়ে নাহিদা বসবাস করত। নাহিদার মা জেসমিন বলেন, গত বৃহস্পতিবার সকালে নাহিদার সাথে তারা ভিডিও কলে কথা বলেন। কিন্তু বিকাল ৩ টার পর থেকে নাহিদার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। এর পর আর কোন যোগাযোগ করতে পারেনি। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে নাহিদার স্বামী মিজানের চাচাত ভাই জুয়েল ফোন করে নাহিদার বাবাকে জানান নাহিদা অসুস্থ। জুয়েল তাদেরকে ছাগলনাইয়া হাসপাতালে যেতে বলেন। ফোন পেয়ে নাহিদার মা বাবা ছাগলনাইয়া উপজেলা হাসপাতালে গিয়ে নাহিদার মরদেহ দেখতে পান।

এরপর ছাগলনাইয়া থানা পুলিশের সহায়তায় নাহিদার মরদেহ ফেনী সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। শুক্রবার রাত সোয়া দশটায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নাহিদার মরদেহ ফেনী সদর হাসপাতালের মর্গে রয়েছে বলে জানান ছাগলনাইয়া থানার উপ পুলিশ পরিদর্শক ( এসআই) মাসুদ।

এদিকে নাহিদার মা জেসমিন বলেন তার মেয়ের মুখের থুতনির নীচে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। দুই পায়ের গোড়ালির মাংশ খসে উঠে গেছে। এক পা ভাঙ্গা অবস্থায় রয়েছে। তিনি জানান ঘটনার পর থেকে নাহিদার ৭ মাসের শিশু কন্যার কোন হদিস পাচ্ছেনা তারা। মুসকান নামের এ শিশু কন্যা বেঁচে আছে কিনা তাও তাঁরা নিশ্চিত নন।

এদিকে ঘটনার পর মৃত নাহিদার নন্নসের স্বামী সামশু ও তার পরিবারের সবাই পলাতক রয়েছে। সামশুর মোবাইল ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও ফোন বন্ধ থাকায় তাঁর বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

এদিকে নাহিদাকে ছাগলনাইয়া উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া সিএনজি অটোরিকশা ড্রাইভার জিয়াদ বলেন সামসু নামের এক লোক জরুরী রোগি আছে বলে তাকে ফোন করে হোসইন্যারখীল নিয়ে যায়। সেখানে সামসুর স্ত্রী কাজল এবং তাঁর ছেলে ধরাধরি করে এক মহিলাকে সিএনজিতে তোলে। ছাগলনাইয়া নিয়ে যাওয়ার পর বুঝতে পারে মেয়েটি মারা গেছে।
এদিকে হোসইন্যারখীল এলাকার বাসিন্দারা জানান, নন্নসের স্বামী সামশুর সাথে নাহিদার সাথে পরকিয়া সম্পর্ক ছিল। তাদের ধারনা সামশুর কাছে নাহিদার আপত্তিকর কোন ভিডিও বা ছবি রয়েছে যা দিয়ে সে নাহিদাকে ব্ল্যাকমেইল করে আসছিল। নাহিদা এসব ফেরত চাওয়ায় হয়তো সামশু পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা করছে।
ছাগলনাইয়া থানার এসআই মাসুদ বলেন মৃত নাহিদার বাবা এবং শশুড়বাড়ী ছাগলনাইয়া হলেও ঘটনাস্থল চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির ভুজপুর হওয়ায় সেখানে মামলা করতে হবে। ছাগলনাইয়া উপজেলা হাসপাতালে আনার আগেই নাহিদার মৃত্যু হয়েছে বলে জানান তিনি।
ভুজপুর থানার ওসি হেলাল উদ্দিন ফারুকী সাংবাদিকদের বলেন,নাহিদা নামের এক প্রবাসির স্ত্রীর মৃত্যুর খবর শুনেছি। পরিবারের কেউ কোন অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বাংলাদেশ মেইল /নাদিরা শিমু/NS