চট্টগ্রামের পটিয়ায় মারামারি
হুইপ সামসুলের দাবার চাল, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নিয়ে

বাংলাদেশ মেইল :::

নির্বাচন নির্বাচন এলেই ভোটের মাঠে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ভোট ব্যাংকে হানা দিতে ষড়যন্ত্রের ছক আঁকেন প্রার্থীরা। চট্টগ্রামের পটিয়া আসরের বর্তমান সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ সামসুল হক চৌধুরী এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে ‘ ভোটের মাঠে  সনাতন ধর্মাবলম্বী ‘ গুটি হিসেবে ব্যবহার করছেন।চট্টগ্রামের পটিয়ায় নির্বাচনের মাঠে নৌকা এবং ঈগল সমর্থকদের ( সামসুল হক চৌধুরী)  মধ্যে হাবিলাসদ্বীপে মারামারির ঘটনাতে পরিকল্পিতভাবে জড়ানো হয় স্থানীয় একটি মন্দিরকে। এমন ঘটনাকে সাম্প্রদায়িক উষ্কানির নীল নকশা আখ্যায়িত করেছেন সনাতন ধর্মাবলম্বী বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ পটিয়া উপজেলা সভাপতি রাজিব দাশ গুপ্ত এক বিবৃতিতে বলেন, দীর্ঘদিন থেকে একই কুচক্রী মহলের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ব্যবহার করে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার অপচেষ্টা করছেন। সেই ষড়যন্ত্রের অংশই হলো বৃহস্পতিবারের ঘটনা।পরিকল্পিতভাবে ঘটনা ঘটিয়ে মন্দিরকে জড়িয়ে সাম্প্রদায়িক উষ্কানি দিচ্ছেন হইপ সামসুল হক চৌধুরীর সমর্থকরা। ‘

স্থানীয়রা জানান, ঘটনার দিন পরিকল্পিতভাবে সনাতন ধর্মাবলম্বী কয়েকজনকে জড়ো করেন ঈগল পথিকের প্রার্থী শামসুল হক চৌধুরীর অনুসারী বিজন চক্রবর্তী। একই সময় ওই এলাকায় নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর সমর্থনে প্রচারণা চলছিল। হঠাৎ করে দৌড়াদৌড়ি শুরু হয় এবং কিছুসময় পর এলাকায় ছড়িয়ে দেওয়া হয় বিজন চক্রবর্তীসহ তিনজন আহত হয়েছেন নৌকা সমর্থকদের হামলায়।

স্থানীয় বাসিন্দা মনি পাল জানান, ‘ ঈগল এবং নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের সমর্থনের প্রচারণা চলছিল। এবং দুই প্রার্থীর সমর্থকদের কাছ থেকে প্রচারণার লিফলেট ও সংগ্রহ করেছেন তিনি। দুই পক্ষের কোন মারামারির ঘটনা সেখানেই ঘটেনি। ‘

এদিকে, বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে উষ্মা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় পূজা উদযাপন পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠন৷ তাদের মতে, মন্দির একটি পবিত্র জায়গা। মন্দিরে ডুকে কোন পক্ষ প্রতিপক্ষের উপর হামলা করেছে বিষয়টি পুরোটাই গুজব। একটি সঙ্ঘবদ্ধ চক্র সাম্প্রদায়িক উস্কানি তৈরিতে এমন হীন প্রচার করছেন ।

শিক্ষক ও পটিয়া উদযাপন পরিষদের সভাপতি রূপক শীল এবং সাধারণ সম্পাদক রাজিব দাশ গুপ্ত ছোটন এক যৌথ বিবৃতিতে এমন ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছেন। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ পটিয়া উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক নাম ব্যবহার করে ঝুলন দত্ত নামের এক ব্যক্তি। যে অপপ্রচার চালাচ্ছে তা সংগঠনের গঠনতন্ত্র বিরুদ্ধে। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির অনুমোদিত ও জেলা কমিটির স্বাক্ষরিত পটিয়া উপজেলা শাখার পক্ষ থেকে নৌকার বিরুদ্ধে এই অপপ্রচারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ‘

৭ জানুয়ারির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পটিয়া উপজেলার কেলিশহর ইউনিয়নে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মন্দিরে হামলা করে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগাতে চাচ্ছে স্বতন্ত্র প্রার্থী সামশুল হক চৌধুরীর লোকজন এমন অভিযোগ করে নৌকার প্রার্থী দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী সামশুল হক চৌধুরীর অনুসারীরা একের পর এক ঘটনা ঘটিয়ে সাম্প্রদায়িক উষ্কানি দিচ্ছে। এরআগেও কেলিশহর ইউনিয়নের বিশ্বমঙ্গল গীতা সংঘের নারায়ন মন্দিরে গত ৩০ ডিসেম্বর রাতে হামলা চালিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অসম্প্রদায়িক রাজনীতিকে বির্তকিত করার চেষ্টা করেছে। ‘

হাবিলাসদ্বীপ গৌর গোবিন্দ আশ্রম রাস উদযাপন পরিষদের সভাপতি অনির্বান চৌধুরী টুলটুল বলেন, মারামারির ঘটনাটি কোনভাবেই সনাতনী সম্প্রদায় অথবা মন্দিরের উপর হামলা নয়। ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্খিত ঘটনাটি সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত রেষারেষি থেকে উদ্ভূত বলে অনুমেয়। নৌকার প্রার্থী বা নৌকার কোন সমর্থক ঘটনাটির সাথে জড়িত নয়। সনাতনী সমাজ ও মন্দিরের কথা টেনে ব্যক্তিগত ফায়দা হাসিল করার জন্য একটি মহল বিভিন্ন বানোয়াট বক্তব্য পত্রিকা বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করে সনাতনীদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।সনাতনীদের পক্ষ থেকে এই ধরণের অপপ্রচারের প্রতিবাদ জানাচ্ছি। হাবিলাসদ্বীপে নৌকা ও ঈগল সমর্থকরা শান্তিপূর্ণভাবে তাদের নির্বাচনী প্রচারণা সম্পন্ন করেছে। সনাতনীদের বিভ্রান্ত না হয়ে সুষ্ঠুভাবে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে পছন্দমতো প্রার্থীকে ভোট প্রদান করার আহ্বান জানাচ্ছি। ‘

এদিকে, চট্টগ্রামের পটিয়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দিরে স্বতন্ত্র প্রার্থী সামশুল হক চৌধুরীর পক্ষের লোকজন হামলা ও ভাংচুর করার ঘটনার অভিযোগে ৮জনের বিরুদ্ধে পটিয়ার আদালতে মামলা দায়ের হয়েছে।বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) মামলাটি নৌকার প্রার্থী মোতাহেরুল ইসাম চৌধুরীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো- চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শাহাদাত হোসেন ফরিদ বাদী হয়ে পটিয়া সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে এ মামলা করেন। মামলা নং- সিআর১১/২৪।

মন্দিরে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় আসামী করা হয়েছে কেলিশহর ইউনিয়নের দূর্গাপদ চক্রবর্ত্তীর পুত্র ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমন্বয়কারী বিজন চক্রবর্তী (৫০), দুলা মিয়ার পুত্র বোরহান উদ্দিন (৩৫), দূর্গাপদ চক্রবর্ত্তীর পুত্র রতন চক্রবর্ত্তী (৫৫), দুলা মিয়ার পুত্র মো. ইমরান (২৬), নিরঞ্জন দে’র পুত্র প্রভাত দে (৪৮), কৃষ্ণ চক্রবর্ত্তীর পুত্র রাজিব চক্রবর্ত্তী (৪০), হরিপদ দাশের পুত্র সম্রাট দাশ (২২) ও চন্দন সিংহের পুত্র নয়ন সিংহ (২২)।

আদালতে দীর্ঘ শুনানী শেষে বিচারক বেগম তাররাহুম আহমেদ পটিয়া থানার ওসিকে ৭ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।

মামলার বিবরন সূত্রে জানা যায়, গত ৩০ ডিসেম্বর অনুমান রাত ৮টার দিকে পটিয়া উপজেলার কেলিশহর ইউনিয়নের বিশ^মঙ্গল গীতা সংঘ মন্দিরে স্বতন্ত্রপ্রার্থী সামশুল হক চৌধুরীর অনুসারী বিজন চক্রবর্ত্তীরনেতৃত্বে হামলা চালানো হয়। এসময় হামলাকারীরা মন্দিরের ২০ হাজার টাকা ক্ষতি করে।

মামলার বাদী ও নৌকার প্রার্থী মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন ফরিদ অভিযোগ করেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীর লোকজন হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি মন্দিরে হামলা করে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা করছে। তাই আজকে পটিয়া আদালত মামলাটি দায়ের করেছি। মামলার আসামীরা আমাকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি ধমকি দিচ্ছে। বিষয়টি ইতোমধ্যে থানার ওসিকে অবহিত করা হলেও মামলা হিসেবে রেকর্ড না করায় আদালতে মামলা করতে বাধ্য হয়েছি।

পটিয়া থানার ওসি জসীম উদ্দিন বলেন, হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দিরে হামলা ও ভাংচুর করার বিষয়ে থানায় একটি অভিযোগ করা হয়েছিল। পুলিশ হামলার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রমান চেয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে বাদী পটিয়া আদালতে একটি ফৌজদারী আইনে মামলা করেছেন শুনেছি। তবে আদালতের কাগজ পত্র এখনো হাতে পাইনি। পেলে প্রয়োজনীয় আইনানুগ পদক্ষেপ নিব।

এদিকে,  হাবিলাসদ্বীপ শ্রী শ্রী গৌর গোবিন্দ আশ্রমের পক্ষ থেকেও এমন পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের  প্রতিবাদ জানানো হয়েছে ।  হাবিলাসদ্বীপ শ্রী শ্রী গৌর গোবিন্দ আশ্রমের সভাপতি অনির্বাণ চৌধুরী  এক বিবৃতিতে  বলেন,  সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ব্যবহার করে রাজনীতির মাঠে ফায়দা লুটার ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে।