একজন গ্রেফতার
সাংবাদিক পরিচয়ে এতিমখানায় চাঁদাবাজি

পঞ্চগড় প্রতিনিধি :::

বেসরকারি টেলিভিশন এশিয়ান টিভির পরিচয় পঞ্চগড়ে এক এতিমখানায় চাঁদাবাজি করতে গিয়ে মনিরুজ্জামান নামের এক প্রতারক গ্রেফতার হয়েছন।  তার হাতে এশিয়ান টিভির বুম আর গলায় আইডি কার্ড লাগিয়ে পঞ্চগড়ের এতিমখানা নিয়ে ইতিবাচক সংবাদ পরিবেশন করার কথা বলায় জেলা সমাজসেবা অধিদফতরের কর্মকর্তারা তাকে জেলা পরিষদ ডাকবাংলোতে থাকার বন্দোবস্তও করে। এরপর শুরু হয় তাদের মিশন। প্রাইভেট কার নিয়ে ছুটে একের পর এক এতিমখানায়। দলের মূল নায়ক দুই ব্যক্তির একজনের নাম মেহেদী হাসান কবীর (৩২) আরেকজন মনিরুজ্জামান (৫৭)। নামের তালিকা ধরে বিভিন্ন এতিমখানায় গিয়ে শুরু করে চাঁদাবাজি। ভয়ভীতি দেখিয়ে কারও কাছে ৭ হাজার, কারও কাছে ৮ হাজার টাকা নিয়ে ছুটেন তালিকায় থাকা অন্য এতিমখানাগুলো। তাদের অবস্থান চেনাতে সহযোগিতা করেন সমাজসেবা অধিদফতরের কর্মীরা।

বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) দুপুরে পঞ্চগড় সদর উপজেলার চকলাহাট ইউনিয়নের খেনপাড়া উম্মে কুলসুম মদিনাতুল উলুম শিশু সদন ও এতিমখানার শিক্ষকের কাছে হাতিয়ে নেয় ৮ হাজার ৫০০ টাকা। পরে তারা ছুটেন খানবাহাদুর মোকলেছুর রহমান আলিম মাদরাসা ও এতিমখানায়।

এদিকে, কয়েকজন মাদরাসা শিক্ষক বিষয়টি স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে জানালে তারা এশিয়ান টিভির অফিসে খোঁজ নিয়ে নিশ্চিত করেন এরা প্রতারক। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় মনিরুজ্জামানকে আটক করা হয়। এ সময় পালিয়ে যায় মেহেদী হাসান। তাদের ব্যবহৃত ভাড়ায় চালিত প্রাইভেটকারটিও জব্দ করা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসলে তাকে পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়।

এ সময় জিজ্ঞাসাবাদে মনিরুজ্জামান নিজেকে দৈনিক আজকের আলোকিত সকাল পত্রিকার ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি বলে দাবি করেন। অন্যদিকে মেহেদী হাসান কয়েক বছর আগে এশিয়ান টিভিতে কিছুদিন কর্মরত ছিলেন বলেও জানান তিনি। মনিরুজ্জামানের বাড়ি নেত্রকোনা জেলার মদনপুর এলাকায় আর মেহেদী হাসানের বাড়ি নরসিংদী জেলার বেলাবো উপজেলার হোসেনপাড়া এলাকায়। মেহেদীর নেতৃত্বে তারা এভাবেই নিজেদের ঢাকার বড় সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে প্রত্যন্ত এলাকার মানুষদেরকে ঠকিয়ে আসছেন। গত ২৫ মার্চ বিকেলে তারা পঞ্চগড়ে প্রবেশ করে।

এ ঘটনায় শুক্রবার ওই দুই ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা করেছেন খেনপাড়া উম্মে কুলসুম মদিনাতুল উলুম শিশু সদন ও এতিমখানার শিক্ষক রশিদুল হক।

তিনি বলেন, তারা এসেই নিউজ করার নামে বিভিন্ন হুমকি-ধমকি দিতে শুরু করে। নিউজ করলে আমাদের সমাজসেবার বরাদ্দ বন্ধ হয়ে যাবে বলে হুমকি দেয়। চাপের মুখে আমি সাড়ে ৮ হাজার টাকা দেই তাদের। পরে আমি এলাকার অন্য মাদরাসায় খবর নিয়ে জানতে পারি একইভাবে তারা অনেক জায়গায় চাঁদাবাজি করেছে। এক পর্যায়ে তাদের প্রতারণার বিষয়টি জানাজানি হলে তাদের মধ্যে একজনকে স্থানীয়রা আটক করে। আরেকজন পালিয়ে যায়।

খানবাহাদুর মোকলেছুর রহমান আলিম মাদরাসা ও এতিমখানায় শিক্ষক ইউসুফ আলী বলেন, তারা সকালে এসে একবার পরিদর্শন করে যায়। প্রত্যেক মাদরাসায় যাওয়ার সময় তাদের সঙ্গে সমাজসেবার একজন অফিস সহকারী ছিলেন। দুপুরে আবার তারা আসে। এ সময় তাদের উদ্দেশ্য ভালো ছিল না। এক পর্যায়ে স্থানীয় সাংবাদিকদের সহযোগিতায় তাদের আটক করা হয়। মূল হোতা পালিয়ে যায়।

এ ঘটনার বিষয়ে এশিয়ান টিভির পঞ্চগড় প্রতিনিধি আকরুজ্জামান আকতার বলেন, আমি অফিসে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি মেহেদী এক সময় কিছুদিন চাকরি করলেও এখন কর্মরত নন। তিনি বিভিন্ন এলাকায় আমাদের টেলিভিশনের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি করে যাচ্ছেন। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর তাদের একজনকে স্থানীয়রা পুলিশের হাতে তুলে দেয়।

পঞ্চগড় সদর উপজেলার সমাজসেবা কর্মকর্তা লায়লা আরজুমান বলেন, আমাদের পরিচালক মহোদয়কে তারা বলেছে যে এতিমখানা নিয়ে সমাজসেবা অধিদফতরের ইতিবাচক নিউজ করবে। পরিচালক স্যারের নির্দেশনা পেয়ে ডিডি স্যারের নির্দেশেই আমরা তাদের থাকার ব্যবস্থা করি। পঞ্চগড় সদর উপজেলার এতিমখানাগুলোর চেনার সুবিধার্থে আমাদের একজন অফিস সহকারীকে তাদের সাথে পাঠানো হয়। কিন্ত তারা এমনটি করবে আমরা বুঝে উঠতে পারিনি। তাদের আইডি কার্ড ও কথাবার্তা সাংবাদিকসুলভ। কিন্তু এতোটা অবিশ্বাসের পরিচয় দিবে আমরা কল্পনাও করতে পারিনি।

পঞ্চগড় সদর থানার উপ-পরিদর্শক ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আক্কেল আলী বলেন, ওই মামলায় গ্রেফতার মনিরুজ্জামানকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অপর আসামিকেও গ্রেফতারের জন্য আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।