উন্নয়ন বিরোধী যড়যন্ত্রের বেড়াজালে বাংলাদেশ

    জিনাত সোহানা চৌধুরী ::

    উন্নয়নের পথে বাংলাদেশের পথ হাঁটা বাংলাদেশের কখনোই সহজ ছিল না। সদ্য স্বাধীন দেশটি ১৯৭১ পরবর্তী সময়ে যেভাবে বৈশ্বিক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছিল ঠিক সেভাবেই ধর্মের লেবাসে  বাংলাদেশের বর্তমান উন্নয়ন পথযাত্র রুদ্ধ করতে চায় একটি প্রতিক্রিয়াশীল চক্র।

    একাত্তরের ঘাতক, মানবতারিরোধী, যুদ্ধাপরাধী জামাত-মৌলবাদীচক্রের সকল ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হবে।  বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ যখন উন্নয়নে বিশ্ব স্বীকৃতি পেয়েছে, তখন আবার দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। এসব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় সবাইকে প্রস্তুত থাকতে হবে।

    বুঝতে হবে এসব ষড়যন্ত্র ধারাবাহিক ও পরিকল্পিত। সাম্প্রতিক সময়ে প্রথমে একটি মৌলবাদী গোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে দেশে একটি গন্ডগোল পাকানোর চেষ্টা করলো আর তাদের বাতাস দিল বিএনপি-জামায়াত। আর আজ যখন বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালিত হচ্ছে, বিদেশী মেহমানরা দেশে আসা শুরু করেছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অথিতি হিসেবে আসাকে কেন্দ্র করে সারা দেশে  আবার নতুন খেলা শুরু হয়েছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের অর্জনকে এবং এ দেশের উন্নয়নের প্রশংসায় পঞ্চমুখ বিদেশী মেহমানদের সামনে দেশের সুনামকে ম্লান করার ও দেশকে অস্থিতিশীল করার হীন উদ্দেশ্যে সুনামগঞ্জের শালনায় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা করা হয়েছে।

    আকাশচুম্বি চ্যালেঞ্জ আর ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে অগ্রগতির নতুন মাইলফলক সৃষ্টি করেছে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার।
    প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে খাদ্য নিরাপত্তা, সমুদ্র বিজয়, শিক্ষা, স্বাস্থ্য খাতের অগ্রগতি, নারীর ক্ষমতায়ন, অর্থনৈতিক উন্নতি ইত্যাদি ক্ষেত্রে ঈর্ষণীয় সাফল্য এসেছে, আওয়ামী লীগের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এখন নিঃস্ব প্রায়। বিএনপি আগেই বুঝেছে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে কোন লাভ হবে না।

    করোনা সংকটে গণভবনে থেকেই পুরো দেশ পরিচালনা করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পুরো দেশ যেখানে ভয়ে বিহবল, মন্ত্রী এমপিরা করোনার ভয়ে বের হননি সেখানে অনেকগুলো মন্ত্রণালয়ের কাজ সরাসরি পরিচালনা করেছেন তিনি, এখনও করছেন। দক্ষ নেতৃত্বের কারণে অর্থনৈতিক সংকট তৈরী হয়নি, দেশে কেউ না খেয়েও মারা যায়নি। বরং প্রবৃদ্ধি অর্জনে প্রতিবেশি দেশগুলোর চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ।

    এর আগে এমনই আরেক ষড়যন্ত্র ও দেশ-বিদেশের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে নিজস্ব অর্থায়নেই পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের স্বপ্নের সেই পদ্মা সেতু এখন বাস্তবায়নের পথে। গত ১০ ডিসেম্বর সেতুর ৪১তম স্প্যান স্থাপনের মধ্য দিয়ে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার পদ্মা সেতুর পুরো মূল কাঠামো দৃশ্যমান হয়েছে।

    মহামারী করোনার মধ্যেও থেমে ছিল না বাংলাদেশ। ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের সকল কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। করোনাভাইরাসের এই মহামারির সময়ে যখন মানুষের চলাচল সীমিত হয়ে পড়ে, তখন ডিজিটাল প্রযুক্তি যোগাযোগের এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের একমাত্র মাধ্যম হিসেবে পরিগণিত হয়।

    আওয়ামী লীগ জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দেশকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশে পরিণত করবে। সদ্য স্বাধীন, যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে যখন জাতির পিতা তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলায় রূপান্তরের সংগ্রামে নিরন্তর পরিশ্রম করে যাচ্ছিলেন, তখনই ঘাতকেরা ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট কালো রাতে তাঁকে স্বপরিবারে হত্যা করে।আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করতে ৩রা নভেম্বর কারাগারে হত্যা করা হয়েছিল জাতীয় চার নেতাকে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্ত এবং স্বাধীনতা বিরোধী চক্র ও অবৈধ সেনাশাসকদের নির্যাতন আর নিপীড়নের মাধ্যমে ধ্বংস করার চেষ্টা করা হয় জনগণের সংগঠন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে। কিন্তু কোনো অপচেষ্টা শেষ পর্যন্ত  কখনই সফল হয়নি। আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতা-কর্মী, সমর্থকেরা জীবন দিয়ে সকল প্রতিকূলতা, ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে দলকে টিকিয়ে রেখেছে, শক্তিশালী করেছে।

    বাঙালি জাতির প্রতিটি মহৎ, শুভ ও কল্যাণকর অর্জনে আওয়ামী লীগের ভূমিকা রয়েছে।
    দেশ যখন উন্নয়নের সোপানে এগিয়ে যাচ্ছে তখন মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তির দোসররা অস্থিতিশীলতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির অপচেষ্টা করছে। স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যা করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ভূলুণ্ঠিত করতে চেয়েছিল। একই অপশক্তি ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট জাতির পিতার আদর্শ ও রক্তের উত্তরাধিকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের নেতাদের হত্যার মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করতে চেয়েছিল। সবকিছুর লক্ষ্য বাংলাদেশ নামক দেশটির উন্নয়ন অগ্রযাত্রা।

    আমরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বিশ্বাস করি। এই মুলনীতিতেই স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম। কোনো অশুভ শক্তিকে এই দেশে বিস্তার লাভ করতে দেওয়া হবে না। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের স্থান বাংলাদেশে হবে না। আমরা মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার উন্নয়ন, গণতন্ত্র ও দেশবিরোধী অপশক্তির মূলোৎপাটন করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আমি বিশ্বাস করি, এ দেশের শান্তিপ্রিয় জনগণ অতীতের মতো সকল অপশক্তিকে পরাজিত করে বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় প্রতিষ্ঠিত করবে। যে বাংলাদেশ এখন পুরো বিশ্বে উন্নয়নের ‘রোল মডেল।

    দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্বদরবারে শেখ হাসিনা প্রশংসিত হবেন আর তাতে কারো গা জ্বালা করবে না এটা কি হয়? বঙ্গবন্ধুর জীবনে যেমন তেমনি শেখ হাসিনার জীবনেও ষড়যন্ত্রের অশরীরী ছায়া পিছু ছাড়ে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্বে পৃথিবীর অন্যান্য বড় বড় দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ নিজেদের যোগ্যতার জানান দিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। তার বলিষ্ঠ নেতৃত্ব আমাদের ছোট্ট এই দেশকে পৃথিবীর বুকে বারবার করেছে সম্মানিত। এ সকল দেশীয় ও বিদেশী ষড়যন্ত্রকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলবেন সফল রাষ্ট্রনায়ক দেশরত্ন শেখ হাসিনা। এটাই প্রত্যাশা তরুন প্রজন্মের।দেশের অগ্রগতিকে থামিয়ে দিতে পরিকল্পিত  ষড়যন্ত্র হচ্ছে।
    রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের পাশাপাশি জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাস, মাদকসহ নানা প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবেই,মানুষের ঘৃণার আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হোক ষড়যন্ত্রকারীরা। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আরও এগিয়ে যাবে। দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং স্থিতিশীলতার একমাত্র আস্থার জায়গা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা,
    বাংলাদেশ ৫১-এ পা রেখেছে। কিন্তু আমাদের যুদ্ধটা এখনো শেষ হয়নি।

    যুদ্ধাপরাধী রাজাকার-আলবদরদের সন্তানরা এখন দেশে-বিদেশে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। ধর্মান্ধ, মৌলবাদ এবং সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে সারা জীবন লড়াই করে গেছেন বঙ্গবন্ধু। এই অপশক্তি আসলে বাংলাদেশের অস্তিত্বকেই অস্বীকার করতে চায়। এদের কঠোরভাবে দমন করতে হবে। এদের বিরুদ্ধে প্রয়োজন আরেকটি যুদ্ধ।
    ইসলাম শান্তির ধর্ম৷ কিন্তু তারা (হেফাজত) যে ভাষায় কথা বলছে, এটা জঙ্গিবাদের ভাষা, সংঘাতপূর্ণ ভাষা৷ ইসলামের নামে এ ধরনের মৌলবাদী, উগ্রবাদী কথা বললে এটা বরদাশত করবেনা এই দেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রজন্ম।

    আজ মৌলবাদী গোষ্ঠী সারাদেশে হুমকি-ধামকি দিয়ে মাঠ গরম করার চেষ্টা করছে৷ আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধের মূল নীতি-আদর্শে বিশ্বাসী রাজনৈতিক কর্মী, আমরা যদি ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিবাদ করি, এরা লেজ গুটিয়ে পালিয়ে যাবে।ধর্মের নামে রাজনৈতিক অপতৎপরতা রুখে দিন। বিশ্বদরবারে প্রশংসায় ভাসছে দেশ।  অন্যদিকে স্বাধীনতা বিরোধীদের সেই চিরচেনা তান্ডব, এইসব উগ্রবাদী ও দেশদ্রোহীদের দেশে থাকার কোন অধিকার নেই।

    জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশকে শুভেচ্ছায় সিক্ত করছেন; স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশ শুধু নিজের পায়েই দাঁড়ায়নি, বরং উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে সারা বিশ্বের কাছে পরিচিত হতে পেরেছে। বাংলাদেশের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রাকে অভিনন্দিত করছেন। উন্নয়নের বিস্ময়, বিস্ময়ের বাংলাদেশ স্বচক্ষে দেখার আগ্রহ প্রকাশ করছেন যা বাংলাদেশকে বিশ্বদরবারে মহিমান্বিত করছে। একাত্তরে স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আমরা একটি স্বাধীন দেশ পেয়েছি, আর তারই সুযোগ্য কন্যা বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গড়ে তুলতে চলেছি ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, আধুনিক ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ; বিস্ময়ের বাংলাদেশ।
    অন্যদিকে সেই দেশবিরোধী চক্র দেশে নৈরাজ্যে লিপ্ত মৌলবাদী চক্রের সব ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে। ঐক্যবদ্ধ হয়ে একাত্তরের ঘাতক, মানবতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী জামায়াত-মৌলবাদী চক্রের সকল ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে, মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শেই বাংলাদেশ চলবে, বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের গল্প আগামী প্রজন্মের কাছে শিক্ষণীয় হয়ে থাকবে। বাঙালি জাতির এই আত্মপ্রকাশ অন্যান্য ভূখণ্ডের মানুষের জন্য প্রেরণা হয়ে থাকবে।

    মৌলবাদী গোষ্ঠীগুলো যুগে যুগে দেশকে পিছিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা চালিয়ে আসছে,আজকেও দেশের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র হচ্ছে।

    মৌলবাদী প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তির এ বাংলার মাটিতে এখনও শক্ত ঘাটি বিরাজমান। যখনই তারা সুযোগ পাচ্ছে, তখনই সাপের মতো দংশন করার চেষ্টা করছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিনষ্ট করার চেষ্টা করছে।

    যতদিন না এদেশ থেকে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী ও মৌলবাদী অপশক্তিকে রুখে দিতে আমাদের আরও সচেষ্ট ও সজাগ থাকতে হবে, নতুন প্রজন্মের মধ্যে স্বাধীনতার চেতনা অনেক বেশি। আমরা খুবই আশাবাদী। নতুন প্রজন্ম শুধু অপশক্তিকে শুধু রুখে দেবেনা,এদের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করবে।

    জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেখানো পথেই হাঁটছেন তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জয় বাংলা।।

    লেখক – সমন্বয়ক, সুচিন্তা ফাউন্ডেশন, চট্টগ্রাম