বাংলাদেশ মেইল ::
নগরীর পাহাড়তলী বাজারের মেসার্স মাহী ট্রেডিং নামের একটি চাউল গুদামে রাতের আঁধারে সরকারী চালের বস্তা পরিবর্তন করা হয়েছে। শনিবার (২৫ এপ্রিল) দিনগত রাত দুইটা থেকে গুদামের ভেতরে শ্রমিকদের কাজ করতে দেখা যায়।
গণমাধ্যমকর্মিদের অবস্থান টের পেয়ে আড়তে কাজ করতে থাকা শ্রমিকরা ভেতর থেকে লাইট অফ করে দেয়। রাত সাড়ে তিনটার দিকে ঐ আড়ত থেকে বস্তা পোড়ানো ধোঁয়া বের হতে দেখা যায়। সুত্র জানায়, সরকারী চালের বস্তা পরিবর্তন করার পর ঐ বস্তাগুলো পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছিল তখন।
গোয়েন্দা পুলিশের কিছু সদস্যের পাহাড়ায় গুদামে চালের বস্তা পরিবর্তন করার বিষয়টি টের পেয়ে গুদামের পাশে রাত একটা থেকেই অবস্থান নেয় গণমাধ্যমকর্মিরা। গণমাধ্যম কর্মিদের অবস্থান টের পেয়ে সরে যায় ডিবি পুলিশের সদস্যরা। চলতে থাকে লুকোচুরি। ভোর রাত পর্যন্ত গোয়েন্দা পুলিশের গাড়ি আসে আবার চলে যায়।
ভোরে আবারো আড়তের সামনে এসে দোকান খুলে ভেতরে কাজ করতে থাকা শ্রমিকদের বের করে নেয় ডিবি পুলিশের ঐ সদস্যরা।
আড়তের তালা খুলে দেবার পর বের হতে থাকা শ্রমিকরা গণমাধ্যমকর্মিদের দেখে পালিয়ে যায়। তবে গভীর রাতে ঐ আড়তে কি হচ্ছিল, ঘটনাস্থলে থাকা গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যদের জিজ্ঞেস করলে তারা কোন সদুত্তর দিতে পারেনি।
নগরীর পাহাড়তলী বাজারের মেসার্স মাহী ট্রেডিং নামের এই চালের আড়ত থেকে গেল মঙ্গলবার গভীর রাতে আমদানি করা ৭০ হাজার কেজি (৭০ টন) চাল জব্দ করেছিল পুলিশ। পরদিন সংবাদ সম্মেলন করে চাল উদ্ধারের ঘটনা ফলাও করে প্রচার করা হয় গণমাধ্যমে।
চাল উদ্ধারের ঘটনায় আড়ৎদার আব্দুল বাহার মিয়াকে (৪৫) গ্রেপ্তারও করা হয়েছিল । গ্রেপ্তার বাহার মিয়া স্বীকার করেছিলেন , তিনি সরকারি বস্তা পাল্টে তাঁদের নিজস্ব বস্তায় চাল ভরে বাজারে বিক্রি করতেন।
সংবাদ সম্মেলনে গোয়েন্দা পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল ভারত থেকে আমদানি করা চট্টগ্রাম বন্দর থেকে খালাস হওয়া কিছু সরকারি চাল পাহাড়তলী চাল বাজারে আনা হবে, এমন তথ্য পেয়ে পুলিশ অভিযান চালিয়েছে। এ সময় মাহী ট্রেডার্সের সামনে দাঁড়ানো একটি ট্রাকে তল্লাশি চালিয়ে ২৬০ বস্তা চাল পাওয়া যায়। বস্তার গায়ে ‘বাংলাদেশ সরকারের খাদ্য মন্ত্রণালয়ের’ নাম লেখা ছিল। ট্রাকে চালগুলো দেখার পর তাঁদের চালানপত্র দেখাতে এলএসডি গুদামে নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেগুলো সেখানে না নিয়ে পাহাড়তলী চালবাজারে নিয়ে আসা হয়েছে। পরে আড়তে অভিযান চালিয়ে আরও ১ হাজার ১৪০ বস্তা চাল উদ্ধার করা হয়।
অবৈধ চাল উদ্ধারের পর এ আড়তটি সিলগালা করে দেয়ার কথা জানানো হলেও ঘটনার তিনদিন পর পুলিশের সহযোগিতায় একই আড়তে একই ধরনের অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে। রাতের আঁধারে আড়ত খুলে দিয়ে শ্রমিকদের কাজ করার সুযোগ সৃস্টি করে দেবার যৌক্তিক কারন কি-সে বিষয়ে স্পস্ট কোন ব্যাখা নেই ঘটনাস্থলে থাকা ডিবি পুলিশ কর্মকর্তাদের।
এ বিষয়ে জানতে ডিবি পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করা হলেও তাদের সাথে মুঠোফোনে সংযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয় নি।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার হুমায়ুন কবির জানান, অফিসিয়াল সিদ্ধান্তে সেখানে চাল বস্তাগুলো কাউন্টিং কাজ করছিলেন। কারন সেগুলো কোর্টে জমা দিতে হবে। কোর্ট সম্ভবত নিলামে সব চাল বিক্রি করে দিবে। তাই ডিবি পুলিশের উপস্থিতিতেই হাজারের বেশী বস্তার মুখ বেঁধে প্রস্তুত করা হচ্ছিলো যাতে আজকালের মধ্যে কোর্ট নিলামে বিক্রি করে দিতে পারে বা কোর্টের জিম্মায় পরিবহন করতে পারে।