কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের ৪২ জনের নাম অনুমোদন দিলেন প্রধানমন্ত্রী

বিএম ডেস্ক : ছাত্রলীগের কমিটিতে ৪২ জনের নাম অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঘোষিত কমিটিতে চট্টগ্রামের কেউ স্থান পায়নি।

এক বছর হয়ে গেছে ছাত্রলীগের এখনও পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয় সাধারণত সর্মনিম্ন ২৭১ জন থেকে সর্বোচ্চ ৩০১ জনের।

গতকাল শুক্রবার রাতে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৪২ জনের নাম চূড়ান্ত করেছেন। এই ৪২ জনের নাম যেকোনো সময় ঘোষণা করা হবে।

প্রধানমন্ত্রী এটা অনুমোদন দিয়েছেন বলে জানা গেছে। প্রধানমন্ত্রী তিনদিনের সফরে ব্রুনেই যাচ্ছেন। তিনি সেখান থেকে দেশে ফেরার পর বাকি নামগুলো নিয়ে কাজ করবেন বলে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সুত্র নিশ্চিত করেছে।

উল্লেখ্য, এর আগে ছাত্রলীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদককে কমিটি চূড়ান্ত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা ঐক্যমত্যে আসতে পারেননি। এজন্য প্রধানমন্ত্রী নিজের তার নিজস্ব টিম দিয়ে এই ৪২ জনের নাম চূড়ান্ত করেছেন বলে জানা গেছে। যারা এখন পর্যন্ত ছাত্রলীগের কমিটিতে নিশ্চিত জায়গা পেয়েছেন, তারা হলেন-

১. সায়েম খান – গোপালগঞ্জ
২. শেখ ওয়ালী হামিদ ইনান – বরিশাল
৩. ইয়াজ আল রিয়াদ – ভোলা
৪. ইশরাত তাসমিয়া ইরা – কিশোরগঞ্জ
৫. মেহেদী হাসান রনি – টাঙ্গাইল
৬. রাকিব হাসান – বগুড়া
৭. রকিব আহমেদ রাসেল- গাজীপুর
৮. আল নাহিয়ান খান – বরিশাল
৯. মো. সোহান খান- ময়মনসিংহ
১০. আমিনুল ইসলাম বুলবুল – গোপালগঞ্জ
১১. শওকাতুল হাসান সৈকত- মাগুরা
১২. আল মামুন – গাইবান্ধা
১৩. মোঃ রনি – ফরিদপুর
১৪. আপেল মাহমুদ – নওগাঁ
১৫. সোলায়মান ইসলাম মুন্না – বরিশাল
১৬. মামুন বিন সাত্তার – পিরোজপুর
১৭. বিদ্যুৎ শাহরিয়ার কবির- ফরিদপুর
১৮. মাহাবুব খান – সুনামগঞ্জ
১৯. শারমিন ইতি – মুন্সীগঞ্জ
২০. আরিফুজ্জামান ইমরান- বরগুনা
২১. ইমরান জামাদ্দার – ঝালকাঠি
২২. বেনজির হোসেন নিশি – মাগুরা
২৩. রকিবুল ইসলাম বাধন- কুষ্টিয়া
২৪. ফুয়াদ হোসেন শাহাদত- শরীয়তপুর
২৫. বরকত হোসেন – পিরোজপুর
২৬. আবু সাইদ কনক – পাবনা
২৭. হায়দার হোসেন জিতু – রংপুর
২৮. খাজা খায়ের সুজন – নোয়াখালী
২৯. মোবারক হোসেন- কিশোরগঞ্জ
৩০. খাদিমুল বাশার জয়- বরিশাল
৩১. শুভ্র জ্যোতি শিকদার – প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়
৩২. মিয়া মোহাম্মদ রুবেল – ময়মনসিংহ
৩৩. মাসুদ লিটন – ময়মনসিংহ
৩৪. শ্রাবনী শায়লা – রাজশাহী
৩৫. শহীদ জামান শাহীন- রাজশাহী
৩৬. মহিউদ্দিন- গোপালগঞ্জ
৩৭. শাহাদাত হোসেন- শরীয়তপুর
৩৮. ইশরাত সাদিয়া মিলি- শরীয়তপুর
৩৯. মাহমুদুল রহমান মিঠু- শরীয়তপুর
৪০. তামান্না তাসনিম তমা- শরীয়তপুর
৪১. আসিকুর রহমান রাজীব- ঢা. বি.
৪২. পরশ রহমান- ঢা. বি.

ছাত্রলীগের দুই দিনব্যাপী সম্মেলন হয় ২০১৮ সালের ১১ ও ১২ মে। এর প্রায় দেড় মাস পর গত বছর ৩১ জুলাই রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে ছাত্রলীগের সভাপতি ও গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। ওই দিন গণভবন থেকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তাদের নাম ঘোষণা করেন। একই দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং ঢাকা মহানগরীর দুটি ইউনিটের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করা হয়।

তারপর প্রায় এক বছর হতে চললেও ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি করতে পারেনি সংগঠনের শীর্ষ নেতারা।

সর্বশেষ গত সোমবার আওয়ামী লীগের চার কেন্দ্রীয় নেতাকে গণভবনে ডেকে রোববারের মধ্যে ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করার নির্দেশ দেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে ওই কেন্দ্রীয় নেতারা ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতা শোভন ও রাব্বানীকে দ্রুত সময়ের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ পৌঁছে দেন।

গত বৃহস্পতিবার শোভন ও রাব্বানীকে গণভবনে ডেকে আওয়ামী লীগ সভাপতি আবার একই নির্দেশ দেন। আওয়ামী লীগের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা এসব তথ্য জানান।

তারা আরো জানান, শেখ হাসিনা নির্দেশ দিলেও গত দুই দিন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক টানা বৈঠক করেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছতে পারেননি।

৪২ জনের নাম চূড়ান্ত হলেও কাকে কোন পদ দেওয়া হবে তা নিশ্চিত হয়নি। তাদের বেশিরভাগই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। অল্পসংখ্যক অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের। দুই বছর মেয়াদি পূর্ণাঙ্গ কমিটি ২৭১ বা ৩০১ যত সদস্যেরই হোক না কেন, এই ৪২ জন ছাড়া বাকি কারো নামই চূড়ান্ত করতে পারেননি ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতা।

আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের দুই সদস্য ও ছাত্রলীগের দুই নেতা বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার জন্য শেখ হাসিনা নির্দেশ দিলেও ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতার মধ্যে অমিল থাকার কারণে তা হচ্ছে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান নিয়ে যে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে তাতে ক্ষুব্ধ হয়ে শেখ হাসিনা দ্রুত ছাত্রলীগের কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার ওই নির্দেশ দেন।

এ প্রসঙ্গে ছাত্রলীগের এক নেতা বলেন, সভাপতি কারো নাম প্রস্তাব করলে মানছেন না সাধারণ সম্পাদক। আবার সাধারণ সম্পাদক কারও নাম প্রস্তাব করলে তা মানছেন না সভাপতি। এ অবস্থায় কমিটি ঘোষণা করতে আরো কয়েক দিন লেগে যেতে পারে।

ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতা বলেন, শোভনের পক্ষ থেকে কিছু নাম চূড়ান্ত করা হয়ে গেছে। কিন্তু রাব্বানীর পক্ষ থেকে নামগুলো মেনে নেওয়া হচ্ছে না এবং রাব্বানী চূড়ান্ত করে কারও নামও দিচ্ছেন না। ফলে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশমতো দ্রুত সময়ে কমিটি হচ্ছে না। ছাত্রলীগের সাবেক ওই নেতা আরও বলেন, রাব্বানীর অসহযোগিতা থাকলে শোভন তার মতো করে একটি নামের তালিকা শেখ হাসিনার কাছে জমা দিয়ে আসবেন। পরে শেখ হাসিনাই নেবেন সিদ্ধান্ত।

এ প্রসঙ্গে জানতে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাব্বানীর মোবাইলে একাধিকবার ফোন করেও সাড়া পাওয়া যায়নি। জানতে চাইলে ছাত্রলীগ সভাপতি শোভন বলেন, আমরা চেষ্টা করছি দুয়েক দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করতে। যদি না পারি সে ক্ষেত্রে এ মাসে অবশ্যই কমিটি ঘোষণা করা হবে। তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে কোনো অমিল নেই।

বিএম/রনী/রাজীব