জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে গ্রেফতার করেছে ব্রিটিশ পুলিশ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : তথ্য ফাঁস করে সাড়া জাগানো উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে গ্রেফতার করেছে ব্রিটিশ পুলিশ।খবর এএফপি, গার্ডিয়ান ও ডেইলি মেইল’র।

তার শরণার্থী মর্যাদা তুলে নেয়া হলে লন্ডনে ইকুয়েডর দূতাবাস থেকে বৃহস্পতিবার তাকে গ্রেফতার করা হয়।

ব্রিটেনের মেট্রোপলিটন পুলিশ জানিয়েছে, তার রাজনৈতিক আশ্রয়ের সময়সীমা শেষ হওয়ায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ২০১২ সালের এক ওয়ারেন্ট ইস্যুতে আত্মসমর্পণ না করায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অ্যাসাঞ্জ ওই দূতাবাসে সাত বছর ধরে আশ্রয়ে ছিলেন।

সুইডেনে তার বিরুদ্ধে মামলার ঘটনায় জামিনে থাকার সময় ২০১২ সাল থেকে দূতাবাসটিতে আশ্রয় নিয়ে ছিলেন অ্যাসাঞ্জ।

তখন তিনি অভিযোগ করে বলেছিলেন, তাকে যদি ব্রিটেন থেকে ইকুয়েডরে প্রত্যর্পণ করা হয়, তবে মার্কিন বাহিনী তাকে আটক করতে পারে।

লাখ লাখ মার্কিন কূটনৈতিক গোপন নথি ফাঁস করে আলোচনায় এসেছিলেন অস্ট্রেলীয় নাগরিক অ্যাসাঞ্জ।

যৌন সহিংসতার অভিযোগে করা একটি মামলায় সুইডেনে প্রত্যর্পণ এড়াতে সাত বছর আগে লন্ডনের ইকুয়েডর দূতাবাসে আশ্রয় নিয়েছিলেন অ্যাসাঞ্জ। ২০১০ সালে সুইডেনে দুই নারীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। কিন্তু পরে তা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। তবে বরাবরই আসাঞ্জ তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন।

লন্ডনের মেট্রোপলিটন পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেফতারি পরোয়ানা বাস্তবায়ন করা তাদের দায়িত্ব। ইকুয়েডর সরকার তার রাজনৈতিক আশ্রয় তুলে নিলে তাকে গ্রেফতারে পুলিশ ডেকে এনেছে দূতাবাস কর্তৃপক্ষ।

এ প্রসঙ্গে যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব সাজিদ জাবিদ টুইটারে বলেছেন, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। সাত বছর ইকুয়েডরের দূতাবাসে কাটানোর পর অ্যাসাঞ্জকে এখন পুলিশ হেফাজতে নেওয়া যাচ্ছে। তাকে যুক্তরাজ্যের বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।

গ্রেফতারের পরপরই উইকিলিকসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ইকুয়েডর অবৈধভাবে অ্যাসাঞ্জের রাজনৈতিক আশ্রয় তুলে নিয়েছে। এটি আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।

তবে উইকিলিকসের এ দাবি অস্বীকার করেছেন ইকুয়েডর প্রেসিডেন্ট। তিনি তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এ টুইট বার্তায় জানান, আন্তর্জাতিক নিয়মের ব্যত্যয় ঘটানো এবং দৈনন্দিন জীবনের প্রটোকল ভাঙায় ইকুয়েডর অ্যাসাঞ্জের রাজনৈতিক আশ্রয় তুলে নিচ্ছে।

তিনি বলেন, অ্যাসাঞ্জ ব্রিটেনে বিচারের মুখোমুখি হবেন। সহযোগিতার জন্য ইকুয়েডর সরকারকে আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আসলে কেউ আইনের উর্ধ্বে নয়।

গত সপ্তাহে সাংবাদিক ও অ্যাসাঞ্জ সমর্থক জন ফিলগার লোকজনকে দূতাবাসের বাইরে জড়ো হয়ে অ্যাসাঞ্জকে রক্ষা করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি এই সাহসী যোদ্ধার সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন।

এর আগে তাকে লন্ডনের ইকুয়েডর দূতাবাস থেকে তাড়িয়ে দেয়ার আশঙ্কায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘ।

উইকিলিকসের টুইটার পোস্টে দাবি করা হয়েছে, ইকুয়েডরের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন- লন্ডনে সে দেশের দূতাবাস থেকে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে যেকোনো সময় বের করে দেয়া হবে।

জাতিসংঘের নিপীড়ন বিষয়ক ওই বিশেষ দূত আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, এতে ভয়াবহ নিপীড়নের শিকার হতে পারেন বিকল্প সাংবাদিকতার উদাহরণ সৃষ্টিকারী এই অ্যাকটিভিস্ট।

৪৭ বছর বয়সী অ্যাসাঞ্জ দূতাবাস ত্যাগ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। তার অভিযোগ তিনি দূতাবাস ছাড়লেই তাকে উইকিলিক্সের কর্মকাণ্ডের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ওয়েস্টমিনিস্টার ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তোলার আগে কেন্দ্রীয় লন্ডনের একটি পুলিশ স্টেশনে রাখা হবে অ্যাসাঞ্জকে।

বিএম/রনী/রাজীব