চবিতে পরীক্ষায় জালিয়াত চক্রের মাসুদ আটক

জালিয়াত

পরীক্ষায় জালিয়াত চক্রের অন্যতম সদস্য মো. মাসুদ সরকার। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অন্যজনের হয়ে অংশ নেন তিনি। এক্ষেত্রে মাসুদকে সহযোগিতা করতো জালিয়াত চক্রের একটি বড় সিন্ডিকেট।পরীক্ষায় চান্স নিশ্চিত করার কথা বলে তাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা গ্রহণ করেন মাসুদ। আর চক্রের মূল হোতা ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র ওমর ফারুক। চক্রটি ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী খুঁজে বের করে বিভিন্ন ধাপে কাজ করতো।

গতকাল রোববার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ভর্তি পরীক্ষায় অন্যজনের হয়ে অংশ নিতে গিয়ে আটক হওয়া মাসুদকে জিজ্ঞাসাবাদে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে। চবির স্নাতক প্রথমবর্ষ ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের সমাজবিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘ডি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা চলাকালে তাকে কলা অনুষদ থেকে আটক করা হয়।

মাসুদ সরকার (২৫) জুলকারনাইন শাহী নামের এক ভর্তিচ্ছুর পরীক্ষা দিতে বসেছিলেন। পরে প্রক্টরিয়াল বডি মাসুদ সরকারকে রাত ১০টা পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এসময় চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে।মাসুদ গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের দহবন্ধ ইউনিয়নের আব্দুল কাদেরের ছেলে। তিনি রংপুরের কারমাইকেল কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ছাত্র।জিজ্ঞাসাবাদে মাসুদ টাকার বিনিময়ে রাজশাহী বিশ্বদ্যালয়, হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্বদ্যালয়ের গুচ্ছ পদ্ধতির পরীক্ষায় অন্যের হয়ে অংশ নিয়েছেন বলে স্বীকার করেন।

মাসুদ সরকার প্রক্সির বিষয়টি স্বীকার করে প্রক্টরিয়াল বডিকে বলেন, তিনি গত শুক্রবার ৪৩ তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। চবিতে ১০ হাজার টাকার চুক্তিতে ভর্তি পরীক্ষায় জুলকার নাইন শাহীর বদলি হিসেবে অংশ নিয়েছেন তিনি। এক্ষেত্রে জালিয়াত চক্রের মূল হোতা হিসেবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের ওমর ফারুকের নাম উল্লেখ করেন। এছাড়া বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাসেল সরকার ও তার স্ত্রী সুলতানা রাজিয়াও এ চক্রের সাথে জড়িত বলে মাসুদ স্বীকার করেন।

মাসুদ সরকারের বক্তব্য অনুযায়ী, ‘পরীক্ষায় জালিয়াত চক্রের এই সদস‌্যরা বিভিন্ন ধাপে কাজ করতো। প্রথমে তারা ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী খুঁজে বের করতো। দ্বিতীয়ত, ওমর ফারুক তাদের সাথে টাকার কনট্রাক্ট করতো। আর তৃতীয়ত, ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থীর ছবির সাথে মিলে এমন একজন জালিয়াত চক্রের সদস্যকে বেঁচে নিত।’মাসুদ জানান, ‘জালিয়াত চক্রটি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার অনেক আগে থেকেই ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতো। তাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা গ্রহণ করত। এক্ষেত্রে ওমর ফারুক টাকা ভাগ ভাটোয়ারা করে দিত।’

বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া বলেন, মাসুদকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত তাকে মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেয়। তবে আমরা সন্দেহবশত অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদ করতে আটকে রাখি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মাসুদ স্বীকার করেছে সে জালিয়াতি চক্রের সদস্য। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে জালিয়াতি করে সে সফল। কিন্তু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে জালিয়াতি করে পার পায়নি। এছাড়া জিজ্ঞাসাবাদে মাসুদ আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে। তার ফেসবুক ও ম্যাসেঞ্জার খতিয়েও অনেক রহস্যজনক তথ্য পাওয়া গেছে। আপাতত আমাদের হেফাজতেই আছে সে। আমরা এটা নিয়ে মামলা দায়ের করার কথা চিন্তা করছি।