ইলিয়াস আলীকে তুলে নেবার সময় আইন শৃঙ্খলা বাহিনী উপস্থিত ছিল-ফখরুল

বাংলাদেশ মেইল ::

করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, যারা গুম হয়েছেন, তাদের বেশিরভাগকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকেরা হয় সাদা পোশাকে, না হয় বাহিনীর পোশাকে তুলে নিয়ে গেছে।

‘বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীকে যখন তুলে নিয়ে যায়, তখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিল। যে এ ঘটনা দেখেছে, তাকেও গুম করা হয়েছে। ইলিয়াস আলীর গাড়ির চালককেও গুম করা হয়েছে। লাকসামের সাবেক এমপি হিরুকে (সাইফুল ইসলাম) সাদা পোশাকেও না, একেবারে ইউনিফর্মেই তুলে নিয়ে গেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এভাবে রাজনৈতিক দলের প্রায় ৬০০ নেতা-কর্মীকে গুম করা হয়েছে’, বলেন তিনি।

আজ রোববার সকাল ১১টার দিকে ঠাকুরগাঁও শহরের কালীবাড়িতে নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ঢাকার শাহীনবাগের ছাত্রদল নেতা সুমনের বাড়ি থেকে একইসঙ্গে ৮ জনকে তুলে নেওয়া হয়েছে। সেটাও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পোশাকেই করা হয়েছে। এসব ঘটনায় আমরা সবসময় প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছি। আমরা এসব ঘটনা বলে এসেছি। কিন্তু সরকারের লোকেরা ও মন্ত্রীরা সেটা সবসময় অস্বীকার করেছে। এটা চরমভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্র তাদের ওপর বিভিন্নভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।’

জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের গুম বিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপ দেশের গুম নিয়ে কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে গুমের বিষয়টি নিয়ে জাতিসংঘও চিন্তিত।’

‘জাতিসংঘের গুমবিষয়ক কমিটি (জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের গুম বিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপ) সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে সভা করেছে। আমি বিশ্বাস করি, খুব শিগগিরি আন্তর্জাতিকভাবে এটা নিয়ে এই সরকারকে আরও বড় রকমের সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে’, বলেন তিনি।

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালন করতে না পারার দায় আওয়ামী লীগকেই নিতে হবে বলেও মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের গতকাল দেওয়া এক বিবৃতির পরিপ্রেক্ষিতে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘উনি (ওবায়দুল কাদের) কী বলেন না বলেন, তাতে আমাদের কিছু যায় আসে না, তার এসব কথারও আমরা গুরুত্ব দেই না।’

তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালন না করতে পারার সব দায়-দায়িত্ব আওয়ামী লীগকেই নিতে হবে, এটা তাদের উপরই বর্তায়। ইসি গঠনে ব্যর্থতা, সুষ্ঠু নির্বাচনে ব্যর্থতা ও দেশ পরিচালনায় ব্যর্থতার সব দায়ই হলো আওয়ামী লীগের।’

‘আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ওবায়দুল কাদের ও তাদের সভানেত্রী শেখ হাসিনাও এই দায় কোনোভাবেই এড়াতে পারবেন না’, যোগ করেন তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন গঠনের কোনো প্রক্রিয়ার মধ্যেই থাকব না। এই আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না, এটা পরীক্ষিত সত্য। সে ক্ষেত্রে এই সার্চ কমিটি সম্পর্কে আমাদের আগ্রহ নেই, এ কথা আমরা বার বার বলেছি। সার্চ কমিটির প্রধান যাকে করা হয়েছে, তিনি আওয়ামী ঘরানার লোক। সেখানে আমরা কীভাবে আশা করতে পারি এই কমিটি নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করবে।’

সরকারবিরোধী আন্দোলন জোরদার সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘লিবারেল ডেমোক্রেটিক দলের কর্মসূচি হিসেবে আমরা জনসমাবেশ করছি। করোনা পরিস্থিতির কারণে এটা আপাতত স্থগিত আছে, আবারো শুরু হবে। সেই আন্দোলনও জনগণকে নিয়েই হবে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ আন্দোলন বলতে বোঝেন হরতাল। আপনারাও এটাই দেখতে চান। দেশে গণতান্ত্রিক সরকার থাকলে এই ধরনের কর্মসূচিগুলো উপযোগী হয়। কিন্তু যখন গণতান্ত্রিক সরকার থাকে না, তখন অন্যরকম কৌশল অবলম্বন করতে হয়। আন্দোলনের যে কৌশল নিলে আন্দোলনটাকে সফল করতে পারব, আমরা সেভাবেই এগুচ্ছি।’

রাষ্ট্রে বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে মানুষের মধ্যে অসন্তোষ সম্পর্কে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ফ্যাসিজমের লক্ষ্যই হলো মানুষের মধ্যে ভীতি সঞ্চার করে স্তব্ধ করে দেওয়া, তাদের মনোবল ভেঙে দেওয়া। এমন সব ঘটনা নিয়ে উত্তর কোরিয়ার “নাইনটিন এইটি ফোর” নামে একটি সিনেমায় একচ্ছত্রবাদী ব্যবস্থায় নাগরিক ব্যক্তিজীবন, সামাজিক জীবন, চিন্তা-ভাবনা ও বিশ্বাস সব কিছুর ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।’

‘যখন মানুষের মস্তিষ্ক নিয়ন্ত্রণে চলে যায়, তখন তারা প্রতিবাদ, প্রতিরোধ ও সোচ্চার হতে পারে না। ধীরে ধীরে মানুষ মেনে নেয় সব কিছু। বাংলাদেশে এখন সেই অবস্থাই চলছে’, বলেন তিনি।

এসময় ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমুর রহমান, সহ-সভাপতি আবু তাহের, নুর-ই শাহাদত, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক পয়গাম আলী, আনসারুল হক, পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক তারিক আদনান, দপ্তর সম্পাদক মামুনুর রশিদ, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব হোসেন এবং জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মো. কায়েসসহ বিএনপির বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।