আনোয়ারা বিএনপির নগ্ন গ্রুপিং
দলের নেতার মামলায় জামিন পেয়েও জীবিত ফিরলেন না যুবদলের আলমগীর

বাংলাদেশ মেইল ::

চট্টগ্রাম কারাগারে দক্ষিণ জেলা যুবদলের সদস্য মোহাম্মদ আলমগীরের মৃত্যু, জানাজায় দলের একটি অংশের ঢোল বাদ্য-বাজনা নিয়ে বিজয় উৎসব পালনে ক্ষোভে ফুঁসছে যুবদলের নেতাকর্মীরা। কারাগারে মৃত্যবরন করা যুবদল নেতার দাফনকার্যে অসম্মান করার মতো হিংস্র ঘটনা নিয়ে মুল দলকে লিখিতভাবে জানাবে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবদল।

কেন্দ্রীয় যুবদল, দক্ষিণ জেলা যুবদলের নেতাদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়।

জায়গা জমি সংক্রান্ত বিরোধে মারামারির মামলায় একমাস কারাগারে থাকার পর চট্টগ্রাম কারাগারে মৃত্যুবরন করেছেন হতভাগা যুবদল নেতা মোহাম্মদ আলমগীর। তার জামিনের আদেশ চট্টগ্রাম কারাগারে পৌঁছায় বৃহস্পতিবার (১৯মে মে) বিকেলে। ফলে বৃহস্পতিবার কারাগার থেকে ডিসচার্জ পাননি তিনি। পরদিন শুক্রবার (২০ শে মে)  সকালে  যাবতীয় কার্যাদি সম্পন্ন করে কারাগার থেকে বের হবার জন্য লাইনে দাঁড়ান, সেখানেই তিনি অসুস্থ হয়ে মারা যান।

প্রয়াত যুবদল নেতা  আলমগীরের আইনজীবী ওহিদুল আলম বলেন, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে আলমগীর হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন। তবে আলমগীরের পরিবারের  আবেদনের প্রেক্ষিতে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে তার লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। তার হৃদরোগের কোন অতীত ইতিহাস নেই।  ‘

এডভোকেট অহিদ জানান, ‘ ২০০১ সালে করা আলমগীর বিরুদ্ধে একটি রাজনৈতিক  মামলা ছিলো। সেই মামলাটি আমি পরিচালনা করে আসছিলাম। সেটি থেকে আলমগীর খালাস পেয়েছিলেন। নতুন মামলাটি জায়গা জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে মারামারির মামলা। এই মামলার ভুক্তভোগী বিএনপি নেতা মোহাম্মদ  জাকের। প্রকৃতপক্ষে জমি সংক্রান্ত বিরোধে দুই পক্ষেরই কয়েকজন হতাহত হয়েছিলেন। কিন্তু রাজনৈতিক তদবিরের কারনে  মামলা নেয়া হয়েছে এক পক্ষের। ‘

জানা গেছে, বিএনপি নেতা জাকের সম্প্রতি উপজেলা বিএনপির  যুগ্ম আহবায়কের পদ পেয়েছেন । তিনি সদস্য সচিব লায়ন হেলালের অনুসারী। স্থানীয় নেতাকর্মীদের ভাষ্যমতে,  রাজনৈতিক দ্বন্দের কারনে মামলায় জড়িয়ে জেলে পাঠানো হয় আলমগীরকে। দায়ের করা মামলার বাদি জাকেরের ভাতিজা জসিমউদদীন। রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের জেরে তাকে ঘায়েল করতে চেয়েছে প্রতিপক্ষ।

এদিকে, পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি বাবার কারনে ভেঙে পড়েছেন তার দুই ছেলে। তাদের দুইজনের বয়সই পনের বছরের নিচে। জানা গেছে, আলমগীর নির্মাণ সামগ্রীর ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির মৃত্যু কারনে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে তাদের ভবিষ্যতও।

জানতে চাইলে দক্ষিণ জেলা যুবদলের সাধারন সম্পাদক মোহাম্মদ আজগর জানান,  ব্যক্তিগতভাবে দক্ষিণ জেলা  যুবদলের সদস্য  আলমগীর ধার্মিক ছিলেন। তিনি সবসময়  বিরোধ এড়িয়ে চলতেন। জমি সংক্রান্ত বিরোধের মামলায় গ্রেফতার হয়ে একমাস কারাভোগের পর তার জামিন হয়  গেল বৃহস্পতিবার। শুক্রবার জেল থেকে মুক্তি পেয়েছেন ঠিকই, কিন্তু মৃত অবস্থায়। ‘

দক্ষিণ জেলা যুবদলের সভাপতি মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, যুবদল নেতা আলমগীরের মৃত্যুতে দক্ষিণ জেলা যুবদলের চরম ক্ষতি হয়েছে। তিনি স্থানীয় মসজিদ কমিটিরও সভাপতি ছিলেন। জামিনে মুক্ত হবার পরও কারাগারে তার মৃত্যুর রহস্য  তদন্তের দাবি করছি। জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে যারা মামলা করেছেন তার বিরুদ্ধে, গ্রেফতার করিয়েছেন – তাদের বিচার এই জগতে না হলেও পরকালে সৃস্টিকর্তা করবেন। ‘

চাতরি চৌমুহনীতে শুক্রবার অনুষ্ঠিত আলমগীরের জানাজায় বিএনপির সদস্য সচিব হেলাল,তার অনুসারীদের কেউই অংশ নেন নি। এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন আলমগীরের পরিবারের সদস্যরা। তবে উপজেলা বিএনপির আহবায়কসহ বেশ কয়েকজন যুগ্ম আহবায়ক জানাজা ও দাফনের সময় উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন দক্ষিণ জেলা যুবদলের সভাপতি, সাধারন সম্পাদকও।

স্থানীয় সাংবাদিকরা জানান, জানাজার খবর পেয়ে বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক জাকেরের নির্দেশে ঢোল বাদ্য-বাজনা নিয়ে এলাকায়  বিজয় উৎসব পালন করেছে বিএনপির একটি অংশ। সাংবাদিকদের দেয়া  তথ্য অনুযায়ী  নতুন কমিটির সদস্য সচিব লায়ন হেলালের ইঙ্গিতে এমন ঘৃন্য মনোভাবের পরিচয় দিয়েছেন তার অনুসারীরা। জাকের ইউনিয়ন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

শুক্রবার রাত থেকে এই বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সমালোচনার জড় তুলেন স্থানীয়রা। জানাজায় অংশ না নিয়ে বাদ্য-বাজনা, ডোল নিয়ে বিজয় উৎসবে মেতে উঠার মতো বিএনপি নেতাদের কুৎসিত বিকৃত মনোভাবের সমালোচনা করতে দেখা গেছে  অনেককেই।

আলমগীরের পরিবারের এক সদস্য জানান, আনোয়ারা উপজেলায় হেলালের গ্রুপ করতে রাজি হননি আলমগীর। সেকারণেই তাকে পরিকল্পিতভাবে মামলায় জড়ানো হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে। আলমগীর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন। গত রমজানে মসজিদে ইতিকাফও নিয়েছিলেন। এবার কারাগারে থাকার কারনে ইতিকাফ নিতে পারেন নি। ‘

আলমগীরের ভাই জানান,  জমি সংক্রান্ত বিরোধে হাতাহাতির ঘটনায় দুই পক্ষের লোকজন আহত হয়েছেন। কিন্তু আনোয়ারা থানায় যোগাযোগ করেও মামলা দিতে পারিনি আমরা। বিএনপি নেতা জাকেরের মামলায় আলমগীরকে পরিকল্পিতভাবে আসামি করা হয়েছে। বিষয়টি যতটুকু না, রাজনৈতিক কারনে বড় করা হয়েছে  ‘।

এবিষয়ে আনোয়ারা উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোশারফ হোসেন বলেন,  ‘ একজন মুসলমানের জানাজায় এহেন গর্হিত কাজ যারা করেছেন তাদের আমরা বিএনপির লোক মনে করি না। অনুপ্রবেশকারী এই অংশের নেতা হেলালের বিরুদ্ধে  আমরা কমিটির ঘোষনার আগেই লিখিতভাবে অভিযোগ করেছিলাম কেন্দ্রে। জামাল উদ্দিন অপহরণ ও হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত  হেলাল উদ্দিনের লোকজন এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে। এরা দলের আদর্শকে ধারন করেই না।  দলের যুগ্ম আহবায়ক  জাকেরের করা মামলার জেলে গিয়ে প্রাণ দিয়েছেন দক্ষিণ জেলা যুবদলের নিবেদিত প্রাণ কর্মি আলমগীর। বিএনপি বিরোধী  একটি বিশেষ মহলের এজেন্ট এরা।  ‘

যুবদল নেতার নামাজে জানাযার সময় একই এলাকায় বাদ্য-বাজনা নিয়ে বিজয় উৎসবের আয়োজন করার সাথে জড়িত আনোয়ারা  বিএনপি  নেতাকর্মিদের বিষয়ে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবার বিষয়ে মুল সংগঠনকে চিঠি দেবার প্রস্তুতি নিচ্ছে কেন্দ্রীয় যুবদল।