স্ক্র্যাপের দাম কমেছে, কমেনি রডের দাম

ওয়াহিদ জামান ::

আন্তর্জাতিক বাজারে জাহাজের স্ক্র্যাপের দাম কমলেও দেশের বাজারে রডের দাম কমেনি। রড ও নির্মাণ সামগ্রী  দামের উর্ধগতির কারনে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজও থমকে আছে গেল দুই বছর যাবত। দেশজুড়ে বিভিন্ন সরকারী সংস্থার উন্নয়ন কাজের সাথে জড়িত ঠিকাদারেরা ‘রেইট রিসিডিউল’ করার দাবি আসলেও নির্মান সামগ্রীর দামের তেজ কমেনি। দাবির মুখে গণপূর্ত অধিদফতরের নতুন দর অনুযায়ী সরকারি প্রকল্পে প্রতি টন রডের দাম ৭২ হাজার টাকা করে নির্ধারণ করা হয়।

কিন্তু, রডের দাম নিয়ে বাজারে নতুন কোনো সুখবর নেই। গত মার্চে দেশের বাজারে প্রথমবারের মতো এক টন রডের দাম ৯০ হাজার টাকা ছাড়িয়ে যায়।গতমাস থেকে বিশ্ববাজারে রড তৈরির কাঁচামালের দাম কমলেও দেশের বাজারেও পাল্লা দিয়ে বেড়েছে রডের দাম। সংশ্লিষ্টদের দেয়া তথ্যমতে, রড উৎপাদনের প্রধান কাঁচামাল স্ক্র্যাপের প্রায় ৮০ শতাংশই আমদানি করা হয় আমেরিকা ও ইউরোপের কয়েকটি দেশ থেকে। বাকি ২০ শতাংশ আসে দেশীয় জাহাজ ভাঙা স্ট্ক্র্যাপ থেকে।

শীপ ব্রেকিং ইয়ার্ড মালিক সমিতির সভাপতি আবু তাহের বলেন, ইস্পাত খাতের প্রধান কাঁচামাল পুরোনো জাহাজের স্ক্র্যাপের  দাম মানভেদে  টনপ্রতি কমেছে অন্তত ছয় হাজার টাকা। ঈদুল ফিতরের পরও প্রতি টন স্ক্র্যাপ ৭০ হাজার টাকায় বিক্রি হতো, এখন সেটি ৬৪ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে বিশেষ করে ইউরোপে পুরোনো জাহাজের দাম কমছে, চীনসহ বিভিন্ন দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারের চাহিদা ও উৎপাদন কম হওয়ায় স্ক্র্যাপের দাম কমছে। স্থানীয়ভাবে অনেক ইয়ার্ড এই দামে স্ক্র্যাপ বিক্রি করতে পারছে না বলে নতুন করে জাহাজ আনা বন্ধ করেছেন। ‘

বাজার বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত তিন মাস ধরে টানা দরপতনে স্ক্র্যাপের দাম কমেছে টনে কমপক্ষে ২০ হাজার টাকা কমলেও গেল তিন সপ্তাহের বাজারের তথ্য বলছে রডের দাম টনপ্রতি মাত্র ২-৩ হাজার টাকা পর্যন্ত কমেছে।

এখনো প্রতি টন কিং স্ট্রিম রড বিক্রি হচ্ছে ৮৩ হাজার টাকায়৷ প্রাইম ৮৪ হাজার, পিএইচপি ৮৭ হাজার পাঁচশ,  কেএসআরএম টন প্রতি ৮৮ হাজার পাঁচশ, আরআরএম ৮২ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে৷ বিএসআরএম টন প্রতি ৮৯ হাজার পাঁচশো টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর জিপিএইচ ইস্পাত  রড বিক্রি করছে ৮৭ হাজার টাকা, আরএসআরএম ৮৪ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

যদিও বলা হচ্ছিল  কভিডের প্রভাবে গত দেড় বছরে  স্ক্র্যাপের দাম দ্বিগুণ হবার  কারনে রডের দাম কমানো সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতাদের দাবি (বিএসএমএ) সাম্প্রতিক সময়ে  ডলারের বিনিময় মূল্য বেড়ে যাওয়ায় ইস্পাত কোম্পানিগুলো ইস্পাত পণ্যের দাম কমায়নি। এখন আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিদিনই স্ক্র্যাপের দাম কমছে। ফলে দাম রডের কমার সম্ভাবনা রয়েছে।

এভাবের বাজেটে বিভিন্ন ধরনের এমএস প্রোডাক্টের ক্ষেত্রে উৎপাদন পর্যায়ে বিদ্যমান সুনির্দিষ্ট করের পরিমাণ টনপ্রতি ৫০০ টাকার পরিবর্তে ২০০ টাকা করা হয়েছে । এছাড়া নির্মান সামগ্রীর মধ্যে  কংক্রিটের রেডি মিক্সের উৎপাদন পর্যায়ে বিদ্যমান মূসক অব্যাহতি প্রত্যাহার করা হয়েছে। এতোকিছুর পরও দেশের বাজারে কমেনি রডের দাম।

দেশে এমএস রডের বার্ষিক চাহিদা ৬০ লাখ মেট্রিক টন; বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে ঠিকাদাররা  মোট চাহিদার অর্ধেক ব্যবহার করে থাকেন। এমএস রডের দাম ক্রমাগত বৃদ্ধির কারনে  নির্মাণখাতে দরকারি অন্যান্য উপকরণের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে।

চট্টগ্রাম এলজিইডি ঠিকাদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান টিটু বলেন, ‘ ফেব্রুয়ারী মার্চে মাত্র দেড় মাসের ব্যবধানে রডের দাম ১৫ হাজার টাকা করে বেড়েছে।  আমরা যেসব কাজ পেয়েছি সেগুলো বর্তমানে চালু রাখা সম্ভব হবে না। আমরা রেইট রিসিডিউল করার দাবি করেছি। ঠিকাদারেরা বাজেটের অপেক্ষায় ছিলাম। কিন্তু বাজারে নির্মান সামগ্রীর দাম কমেনি। স্ক্র্যাপের দাম কমেছে কিন্তু রড উৎপাদনকারীরা দাম কমাই নি। ‘