পানি দূষণে মরে যাচ্ছে রামগড় লেকের মাছ

রামগড় প্রতিনিধি ::

খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গনের সরকারি লেক রেস্টুরেন্টের তৈলাক্ত বর্জ্য  ও পৌরসভার ড্রেনের ময়লা আবর্জনায় পানি দূষিত হয়ে মাছসহ বিভিন্ন জলজ প্রাণি মরে যাচ্ছে। পানি দূষণের কারণে লেকের জলজ জীববৈচিত্রের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে।

এদিকে, পর্যটক ও সৌন্দর্য পিপাসু এবং স্থানীয়দের কাছে আকর্ষণীয়  হয়ে উঠা শত বছরের এ প্রাকৃতিক লেক এলাকার পরিবেশ এখন পঁচা মাছের দুর্গন্ধে বিষিয়ে উঠেছে। এমন দুরবস্থায় সচেতনমহলে চরম ক্ষোভের সৃস্টি হয়েছে।

জানা যায়, লেকটিকে ঘিরে ২০০৩ সালের দিকে উপজেলা পরিষদের সামনে প্রায় সাড়ে ৬ একর জায়গায় গড়ে তোলা হয় পর্যটন স্পট। প্রশাসনিক প্রয়োজন ও সৌন্দর্যবর্ধনে লেকের পাড়ে স্থাপিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় ভাস্কর্য, মুক্তিযদ্ধের ম্যুরাল,শহীদ মিনার। লেকের ওপর অবস্থিত ঝুলন্ত সেতু এবং এর চারিপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য জেলার সীমানা ছাড়িয়ে দূুরদুরান্তের পর্যটক ও প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে আকর্ষণীয় পর্যটন স্পটে পরিণত হয়। এ কারণে গত বছরের অক্টোবরে লেকের পাড়ে ব্যক্তি উদ্যোগে চালু করা হয় গোধূলি এবং এর প্রায় ৩ বছর আগে লেকভিউ নামে দুটি রেস্টুরেন্ট। এ রেস্টুরেন্টের গ্রাহকদের হাত ধোয়া এবং খাবারের প্লেট বাটি ইত্যাদি ধোয়া পানি ফেলা হচ্ছে লেকে। অন্যদিকে লেক থেকে কিছুটা দূরবর্তী লেকভিউ নামে রেস্টুরেন্টের গ্রাহকদের ব্যবহৃত  পানিও সরু ড্রেনের মাধ্যমে ফেলা হচ্ছে লেকে।রেস্টুরেন্টের এ তৈলাক্ত ও চর্বি জাতীয় খাবারের অংশ ফেলার কারণে পুরো লেকে তা ছড়িয়ে পানির উপর তেলের স্তর ভাসতে থাকে। এ ছাড়া পৌরসভার ড্রেনের মাধ্যমে অফিস পাড়ার ডেবার পাড়ের বাসা-বাড়ির পয়:নিষ্কাশনের পানিও লেকে ফেলা হয়।ফলে দূষিত হয়ে পড়ে লেকের পানি।পানি দূষনের কারণে লেকের মাছ মারা যাচ্ছে । গত ২০-২৫ দিনে বেশকিছু মাছ মরে ভাসতে থাকে  লেকজুড়ে। এসব মরা মাছ পঁচে-গলে লেকের পানিও দুর্গন্ধ হয়ে পড়েছে। পুরো লেক এলাকায় বাতাসে পঁচা মাছের দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। মাছ ছাড়াও বিভিন্ন জলজ প্রাণিও মারা যাচ্ছে। এদিকে,পানি দুষিত হওয়ায় লেকে গোসল করে পার্শ্ববর্তী বাসিন্দারা চর্ম রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ফলে এখন অনেকেই গোসলসহ লেকের পানি ব্যবহার করছেন না।

রামগড় উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিজয় কুমার দাশ জানান,পানি পরীক্ষা করে এটি নিশ্চিত হওয়া গেছে তৈলাক্ত ও চর্বি জাতীয় বর্জ্যের কারণেই লেকের পানি দুষিত হয়েছে। আর তৈলাক্ত ও চর্বি জাতীয় বর্জ্য  খেয়ে মাছ রোগাক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে।এছাড়া তেলের স্তর পড়ায় পানির সাথে অক্সিজেনের মিশ্রন হচ্ছে না। এতে মাছের স্বাভাবিক শ্বাসপ্রশাস প্রক্রিয়াও বিঘ্নিত হচ্ছে। ‘

তিনি আরও জানান, মৃত মাছ পরীক্ষা করে দেখা গেছে পেট থেকে তৈলাক্ত তরল রস বের হয় এবং মুখ ও শরীরের ক্ষত রয়েছে। গোধূলি রেস্টুরেন্টের মালিক রুবেল বড়ুয়া জানান গোধূলি রেস্টুরেন্টের ৯০% রান্নাঘরের আবর্জনা পাইপ লাইনের মাধ্যমে রামগড় পৌরসভার ট্রেনে গিয়ে পড়ছে,রামগড় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে ইতিমধ্যে হাত ধোয়ার বেসিন এর লাইন গুলো সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

রামগড় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খোন্দকার মো: ইখতিয়ার উদ্দীন আরাফাত বলেন,লেকের পাড়ের রেস্টুরেন্টের তৈলাক্ত বর্জ্যের কারণেই পানি দুষণ ও মাছ মারা যাওয়ার কারণ উদঘাটনের পরই রেস্টুরেন্টের মালিকদের ডেকে এনে কঠোরভাবে সর্তক করা হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে লেকের সাথে সংযুক্ত সকল বেসিন ও ড্রেনেজ লাইন অপসারণ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ‘

তিনি আরও বলেন,লেকের সাথে সংযুক্ত পার্শবর্তী বাসা বাড়ির সবগুলো ড্রেন বন্ধ করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

রামগড় পৌসভার মেয়র মো: রফিকুল আলম  লেকটি অমূল্য সম্পদ উল্লেখ করে বলেন,বিগত সামরিক সরকারের আমলে পৌরসভা থেকে সমস্ত নিয়ন্ত্রণ কেড়ে নেওয়ার পর থেকেই লেক ঘিরে গড়া পর্যটন স্পটটি ক্রমশ: ধ্বংস হয়ে যায়।  লেকের পানিও দুষিত করা হয়েছে, যা দুঃখজনক।