আটার দাম বাড়ায় দুশ্চিন্তায় স্বল্প আয়ের মানুষ

স্বল্প আয়ের

বাংলাদেশ মেইল::

  মাছে-ভাতে বাঙালির প্রধান খাদ্য চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় আটার ওপর নির্ভর করছিলো দেশের স্বল্প আয়ের অনেক মানুষ।  কিন্তু আটার দামও এখন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে চালের সঙ্গে। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর থেকে নিত্যপণ্যের বাজার অস্থিতিশীল। চালের দাম বাড়ার পর এবার আটার দামও কেজিতে পাঁচ/ছয় টাকা বেড়েছে।  অথাৎ আটার বাজারে চাল ও আটার দাম এখন প্রায় সমান। বর্তমানে এক কেজি খোলা আটা কিনতে হচ্ছে ৫৪ থেকে ৫৫ টাকা দিয়ে। অথচ একই দামে এক কেজি চাল কেনা সম্ভব। অপরদিকে প্যাকেটজাত আটার দামও প্রতিকেজি ৬০ থেকে ৬৩ টাকা।  অধিকাংশ নিত্যপণ্যেরে আকাশচুম্বী দামের পর এবার আটার দাম বাড়ায় নতুন করে দুশ্চিন্তায় পড়েছে স্বল্প আয়ের মানুষ।

শনিবার (২২ অক্টোবর) রাজধানীর যাত্রাবাড়ী বাজারে এক কেজি খোলা আটার দাম ৫৫ টাকা শুনে চমকে ওঠেন দিনমজুর আব্দুর রহমান।  ক্ষোভ প্রকাশ করে করে তিনি বলেন, নিত্যপণ্যের দাম আর কত বাড়বে?  সংসারে ঘানি আর টানতে পারিনা।  সেই দিনও তো আটার দাম বাড়লো। কিছু দিন আগে কিনছি ৫০ টাকা। আর এখন ৫৫ টাকা হয়ে গেল।  এখন তো দেখি চাল আর আটার দাম সমানে সমান।

কথা হয় যাত্রবাড়ী বাজারের মোহাম্মাদিয়া জেনারেল স্টোরের মালিক নুর হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, আটার দাম অল্প কয়েকদিনের ব্যবধানে ফের বেড়েছে।  বর্তমানে খোলা আটার কেজি ৫৫ টাকায় বিক্রি করছি। কিছুদিন আগেই ৫১ থেকে ৫২ টাকায় বিক্রি করেছি। মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে দাম বেড়ে প্রতিকেজি খোলা আটা ৫৫ টাকা আর প্যাকেট আটা ৫৯ থেকে ৬৫ টাকা হয়েছে।  এই দামে এক কেজি চাল কেনা যাবে।

তিনি বলেন, চলতি মাসের শুরুতে খোলা আটার বস্তা (৫০ কেজি) ২ হাজার ৪০০ টাকায় কিনেছি। এখন ২৬০০ থেকে ২৬৫০ টাকার নিচে বস্তা পাওয়া যাচ্ছে না। আটা ৫৫ টাকা কেজি বিক্রি করছি।  এক বস্তা ৫০ কেজির আটা ২৬৫০ টাকা কিনলে প্রতি কেজির দাম পড়েছে ৫৩ টাকা। এর পর পরিবহণ ব্যয়। ৫৫ টাকা বিক্রিতে লাভ সামান্য হচ্ছে।   একই কথা বললেন রায়েরবাগ বাজারের রাসেল স্টোরের ব্যবসায়ী মো. রাসেল মিয়া। তিনি বলেন, কয়েক দিনের ব্যবধানে আটার দাম আরেক দফা বেড়েছে।  আকিজ, সিটি, বসুন্ধরাসহ বিভিন্ন কোম্পানির বস্তা ২৫৯০ থেকে ২৬৪০ টাকায়।  কিছুদিন আগেও যা ২৩৮০ টাকা থেকে ২ ৪০০ টাকার মধ্যে কেনা গেছে। গমের দামও অনেক বেড়েছে, সংকটও রয়েছে। এক সপ্তাহ আগে তারা গমের অর্ডার দিয়ে এখন পর্যন্ত পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন।

প্যাকেট আটার দামও বেড়েছে বলে জানান রায়েরবাগের খোকন স্টোরের ব্যবসায়ী মো. খোকন। তিনি বলেন, দাম বেড়ে আটার এক কেজির প্যাকেট এখন ৫৯ থেকে ৬৫ টাকা এবং দুই কেজির প্যাকেট ১১৮ থেকে ১২৫ টাকা হয়েছে। আগে এক কেজির প্যাকেট ৫৫ টাকা এবং দুই কেজির প্যাকেট ১১০ টাকায় বিক্রি করেছি।  বড় কোম্পানিগুলো দাম বাড়িয়ে দেওয়ায় আমাদেরও বাড়তি দামে বেচতে হচ্ছে। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজার প্রতিবেদনে অনুযায়ী, গত এক মাসে খোলা আটার দাম ৮ শতাংশ এবং বছরের ব্যবধানে ৫৯.৭ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। একইভাবে বেড়েছে প্যাকেটজাত আটা ও ময়দার দামও।

কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম কমছে। আর দেশের বাজারে আটা-ময়দার দাম দফায় দফায় বাড়ছে, সেটা অস্বাভাবিক। এটা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। চালের দাম বাড়লে নিম্ন আয়ের মানুষেরা আটা খায়। সুতরাং এ ধরনের পণ্যের ক্ষেত্রে সরকারকে আলাদা নজর রাখতে হবে। সরকারকে চাল, তেল, আটার মতো নিত্যয়োজনীয় পণ্যে ভোক্তার স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে হবে।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, সরকার নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্বাভাবিক রাখতে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ভোক্তার অধিকার সুরক্ষায় বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন এবং জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কাজ করছে। এর পরও দেখা যাচ্ছে কিছু পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ।  অনিয়মের বিরুদ্ধে নিয়মিত বাজার অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।