নাজিরহাট পৌরসভার নির্বাচনে রণপ্রস্তুতি

বাংলাদেশ মেইল :::

এক সময় সারা দেশে সন্ত্রাস কবলিত এলাকা হিসেবে পরিচিতি ছিলো ফটিকছড়ি উপজেলার নাজিরহাট। সুষ্ঠ ভোটে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের বিষয়টি সাধারন মানুষের কাছে  অবান্তর ধারনা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে নানা কারণে। ১৬ মার্চ সেই নাজিরহাটে পৌরসভা নির্বাচনকে ঘিরে আতঙ বাড়ছে।

নির্বাচনের দিনক্ষণ যতই কাছে আসছে ভোটের মাঠ দখলের নানা পরিকল্পনা তৈরি করছে প্রার্থীরা। মেয়র পদে নৌকার প্রার্থী জাহেদ চৌধুরী  ছাড়া সরকারি রাজনৈতিক দলের প্রার্থী না থাকলেও আতন্ক কমছে না ভোটারদের মাঝে। ভোটারদের মাঝেও শুরু হয়েছে নির্বাচনী জল্পনা-কল্পনা। চলছে অতীত-ভবিষ্যতের নানা হিসাব-নিকাশ।

এবার মেয়র পদে দলের মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য জাহেদ চৌধুরী। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন  বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন (বিটিএফ) এর প্রার্থী মোহাম্মদ শাহ জালাল, মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন (স্বতন্ত্র), আনোয়ার পাশা (স্বতন্ত্র), এড. মোঃইসমাইল গনী (স্বতন্ত্র), এসএম শফিউল আলম (স্বতন্ত্র) ও জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (স্বতন্ত্র)।

২০১৮ সালের নির্বাচনে  প্রায় ৪০ হাজার ভোটারের মধ্যে ২৫ হাজার ৯২ জন তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ  করেছিলেন যা ছিলো মোট মোট ভোটারের ৬২ শতাংশ। সেই নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী সিরাজুদ্দৌলা ৯ হাজার ৫৮২ ভোট পেয়ে  বিপুল ব্যবধানে  জয় লাভ করেন। পরবর্তীতে তিনি আওয়ামী লীগেই যোগ দিয়েছিলেন। এবারও  নাজিরহাট মোট ভোটার ৪৩ হাজার ১শত ৭১জন।

৫জন মেয়র প্রার্থী,৮জন সংরক্ষিত আসনের মহিলা কাউন্সিলর ও ৪১জন সাধারণ কাউন্সিলদের মধ্যে প্রতিক বরাদ্দ দেন।

পাঁচ মেয়র প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামীলীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী এ.কে.জাহেদ চৌধুরীর প্রতীক  নৌকা। এছাড়া স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মোঃ কামাল পাশার প্রতীক মোবাইল।  স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী ব্যবসায়ী সমিতির নেতা মোঃ নাছির নারিকেল গাছ প্রতীক নিয়ে মেয়র পদে লড়ছেন। স্থানীয়রা বলছেন মেয়র পদে ভোটের লড়াইও এই তিনজনের ভেতরে আবর্তিত হবে। এছাড়া স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী নাজিরহাট পৌরসভা উন্নয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক  এডভোকেট  মোঃ ইসমাইল গণীর প্রতীক  জগ ও স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মোঃ জাহাঙ্গীর আলমের প্রতীক চামচ। ৩টি সংরক্ষিত মহিলা আসনে ৮জন ও ৯টি সাধারণ ওয়ার্ডে ৪১জন প্রার্থী কাউন্সিলর পদে লড়বেন।

পৌরসভার দ্বিতীয় নির্বাচনটি প্রথমবারের মত সম্পূর্ণ ইভিএম পদ্ধতিতে  অনুষ্ঠিত কথা থাকলেও নির্বাচনকে ঘিরে সহিংসতার আশংকা বাড়ছে। আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ে নির্বাচনের তিনদিন আগে নাজিরহাটের সুয়াবিল এলাকায় পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে প্রতিপক্ষের  মোটর সাইকেল। সুত্রমতে,  শক্তি বাড়াতে উত্তর ফটিকছড়ি ও দক্ষিণ ফটিকছড়ি থেকে বাড়ানো হচ্ছে অস্ত্রের মজুদ। সুয়াবিল, বোর্ডস্কুল, ফরহাদাবাদ প্রাথমিক স্কুল,কুম্ভারপাড়াসহ অন্তত সাতটি কেন্দ্রে নির্বাচনী সহিংসতার আশংকা করছেন এলাকাবাসী। একারনে নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে ভোট দিতে অনিচ্ছুক এসব কেন্দ্রের অধিকাংশ ভোটার। জেলার পুলিশ সুপার শফিউল আলম স্পষ্ট করেছেন কোনভাবেই ভোট কেন্দ্র দখল করতে দেয়া হবে না। তার এমন উক্তি এলাকায়  কিছুটা স্বস্তি ফেরালেও শুক্রবার থেকে সন্ত্রাসীদের মহড়া শুরু হয়েছে নাজিরহাটে

মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ  নাসিরের সাথে নৌকার প্রার্থী জাহেদ চৌধুরীর হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে এমন আভাস পাওয়া গেছে ভোটারদের সাথে কথা বলে। প্রার্থী হিসেবে নাসির ( নারিকেল গাছ) নিজের প্রয়াত পিতা ও পারিবারিক ঐতিহ্য,  ব্যবসায়ীদের সমর্থন পাবার কারণে কিছু সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছেন। কিন্তু নৌকার প্রার্থী জাহেদ চৌধুরী আওয়ামী লীগের  মনোনয়ন ও কর্মীদের প্রত্যক্ষ  সমর্থনের কারণে এগিয়ে থাকবেন। আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী  মোঃ কামাল পাশার অন্য দুই প্রার্থীর জন্যই পরাজয় ডেকে আনতে পারেন।

জানতে চাইলে নারিকেল গাছ প্রতীকের মেয়র প্রার্থী  মোহাম্মদ নাসির বলেন, ‘ আমি নিজে ব্যবসায়ী, সমাজকর্মী এবং ব্যবসায়ী পরিবারের সন্তান। আমার প্রয়াত পিতা ও আমাদের মুরুব্বিদের স্বপ্ন ছিলো সুন্দর, ভাতৃত্বপুর্ণ, সৌহার্দপূর্ণ নাজিরহাটের। সেই স্বপ্নপুরনের জন্য জনগণের সাথেই আছি। শেষ পর্যন্ত থাকবো। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে মানুষ ভোট দিয়ে তাদের মেয়র নির্বাচিত করুক। নাজিরহাটের উন্নয়ন করার জন্য জনপ্রতিনিধি হওয়া যেমন জরুরি,  তেমনিভাবে এলাকার প্রতি টানও জরুরি।  ‘

নাসিরের সুরেই জাহেদ চৌধুরী শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘ আওয়ামী লীগ দেশকে উন্নয়নের রোল মডেল বানিয়েছেন। নাজিরহাট পৌরসভাকে সেই আলোকে গড়ে তুলতে চাই। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রাখতে জনগণের কাছে নৌকায় ভোট চাইছি। ‘

তবে এলাকার সাধারণ মানুষ সহিংসতা নয়; সুষ্ঠ ও নিরাপদ পরিবেশে ভোট দেখকে চান। কিন্তু শেষ মুহুর্তে  প্রার্থীদের আচরণ ও পেশীশক্তি বাড়ানোর কর্মযজ্ঞ ভাবিয়ে তুলেছে ভোটারদের।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে নাজিরহাট পৌরসভা গঠিত হয়। ২০১৮ সালের ৩০ মার্চ প্রথম পৌরসভার নির্বাচন হয়। এতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মুজিবুল হককে (প্রয়াত) পরাজিত করে বিএনপি প্রার্থী সিরাজ উদ দৌল্লাহ প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন। পরে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন।