প্রবাসীদের মিলনমেলা
সুইজারল্যান্ডে চাটগাঁইয়া মেজবান

বাংলাদেশ মেইল 

সু ইজারল্যান্ডের জুরিখ শহরে চাঁটগা ভাষাভাষীর মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে গেল রবিবার (২৪ শে সেপ্টেম্বর)।  মিলনমেলার অনিবার্য আয়োজন ছিলো ঐতিহ্যবাহী চাঁটগাঁইয়া মেজবান। শুধু ইউরোপ নয় ইন্দোনেশিয়া থেকেও মেজবানে অংশগ্রহণ করেছে অসংখ্য বাংলাদেশী। বেলা সাড়ে এগারোটা থেকে একটানা সাড়ে চারটা পর্যন্ত ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ধুমধাম করে মেজবানের সুধা উপভোগ করেছে প্রবাসীরা।

চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী মিষ্টান্ন  প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান হাইওয়ে সুইটস এর কর্ণধার আহসান মুরাদ প্রধান অতিথি হিসেবে এই মিলনমেলায় অংশ নেন। পুরো অনুষ্ঠানের সূচনা হয় পবিত্র কোরআন তেলেওয়াতের মধ্য দিয়ে।

চট্টগ্রাম কমিউনিটি সুইজারল্যান্ডের উপদেষ্টা মোহাম্মদ মহসিনের স্বাগত বক্তব্যের পর একে একে মঞ্চে আসেন সংগঠনের সভাপতি এসকান্দর আলী , সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইয়াসিন , প্রধান উপদেষ্টা আনিস খান।

মেজবানের ফাঁকে বাপ্পা মজুমদার ও দলছুট, শ্রাবন্তী এবং সুইজারল্যান্ডে বসবাসরত স্থানীয় শিল্পীদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক সন্ধ্যায় মেতে উঠেন প্রবাসী বাঙালিরা।

চট্টগ্রাম কমিউনিটি সুইজারল্যান্ডের সভাপতি এসকান্দর আলী বলেন, ‘ ১৮ দশকের দিকে চট্টগ্রামে মেজবানের প্রচলন শুরু হয়েছিলো । সেই থেকে মেজবানের প্রচলন শুরু হয়ে বর্তমানে সুইজারল্যান্ডে।  সুইজারল্যান্ডে বসবাসরত চাটগাঁইয়াদের নিয়ে এবারের মেজবান আমার প্রবাস জীবনের স্মরণীয় অংশ হয়ে থাকবে। সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা সাইফুল ইসলাম সমুন ও নজরুল ইসলাম মজুদদার পুরো আয়োজনকে সফল করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন।  ‘।

চট্টগ্রাম কমিউনিটি সুইজারল্যান্ডের সাধারণ সম্পাদক মো: ইয়াসিন বলেন, চট্টগ্রামবাসীর পদচারণে মুখর হয়েছে জুরিচ। সুইজারল্যান্ডে বসবাসরত চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানুষ শুধু নয় ইউরোপের ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্রবাসীরা আমাদের মিলনমেলায় অংশ নিয়েছেন। দুই হাজার মানুষের মেজবান খেয়েছেন। ভবিষ্যতে আমরা এই আয়োজনের পরিধি আরও বাড়াবো। ‘

সংগঠনটি প্রধান উপদেষ্টা আনিস খান বলেন,  ‘ চট্টগ্রামের সংস্কৃতি প্রবাসের মাটিতে আয়োজনের বিষয়টি নিঃসন্দেহে আনন্দের একই সাথে কষ্টসাধ্য । প্রথমবারের মতো সুইজারল্যান্ডের এই মেজবান আমার দীর্ঘ প্রবাস জীবনে স্মৃতিময় একটি দিন হয়ে থাকবে। ‘

উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মোহাম্মদ মহসিন জানান, সুইজারল্যান্ডে বসবাসরত চট্টগ্রামের বাসিন্দাদের মিলনমেলায় পরিণত হয় এই মেজবান অনুষ্ঠান। এতে বিভিন্ন জেলার মানুষও যোগ দেয়। এ যেন প্রবাসের মাটিতে একখন্ড বাংলাদেশ।  ‘

কথা হয় সংগঠকদের অন্যতম  ফিরোজ আলমের সাথে। তিনি বলেন, মেজবান শব্দটি চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় ‘মেজ্জান’ হিসেবে প্রচলিত। সহজ কথায়, মেহমানদারি বা অতিথিদের জন্য বিশেষ ভোজের ব্যবস্থা করাই হচ্ছে মেজ্জান। চট্টগ্রামে সাধারণত কোনো আচার-অনুষ্ঠানকে উপলক্ষ করে মেজবানের আয়োজন করা হয়। ‘মেজবান’ শব্দটি চাটগাঁইয়া সংস্কৃতিহতে  মেহমানদারি বা বিশেষ ভোজ। চট্টগ্রাম অঞ্চলের জনপ্রিয় ও পরিচিত বিশেষ ভোজন হিসেবে খ্যাতি লাভ করা মেজবান প্রথম বারের মতো অনুষ্ঠিত হলো সুইজারল্যান্ডে। ‘

আয়োজকরা বলছেন নান্দনিক সৌন্দর্যের রানী সুইজারল্যান্ডের জুরিখ শহরে চট্টগ্রামবাসীর মিলনমেলায় পরিণত হয় এই মেজবানকে উপলক্ষ্য করে।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের রানীখ্যাত সুইজারল্যান্ডে প্রথমবারের মতো এই মেজবান আয়োজন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছেন বিভিন্ন শহরে বসবাসরত চাটগাঁইয়ারা। সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইয়াসিনের সহধর্মিণী ও সমাজকর্মী   মেহেরুন নিছা মিনা পুরো আয়োজনের মিডিয়া ক্যাম্পেইন, কার্ড ও ব্যানার ডিজাইন, অনুষ্ঠানের সাজসজ্জা করেছেন নিজের নিপুণ মেধায়।

জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রাচীনকালে মেজবানির খাবার পরিবেশন হতো মাটির বাঁসনে। অতিথিরা মাঠে কিংবা উঠানে পাটি বিছিয়ে সারিবদ্ধ হয়ে বসতেন। এখন এ আয়োজনে লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। যেহেতু প্রবাসে আমরা এই মেজবানের আয়োজন করছি সেই ধরনের অনুষঙ্গ সংযুক্ত করতে পারি নি।  তবে ভবিষ্যতের আয়োজনে আমরা গ্রামীণ এই মেজবান সংস্কৃতিকে সুইজারল্যান্ডে পরিচিত করে তুলবো । ‘

নজরুল ইসলাম মজুমদার জানালেন, পুরো আয়োজনের বিভিন্ন দিক।

তিনি বলেন, প্রবাসে সবার কর্মব্যস্ততা থাকে। চাইলেও সময় দেয়া সম্ভব নয়। মেজবান প্রথম বারের মতো হবার কারণে কেনাকাটা থেকে শুরু করে রান্না আপ্যায়ন সবকিছুতেই বেগ পেতে হয়েছে।

সাইফুল ইসলাম সুমন বলেন, সবাই অনুষ্ঠান উপভোগ করেছে, এটাই আমাদের সম্মেলিত কষ্টের সফলতা।

নিজের মেয়ের সাথে মেহেরুন নেসা

মিলনমেলার অনুষ্ঠানে বক্তব্য রেখেছেন  কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব মাসুদ কামাল , আকবর আলী, নুরুল আজীম,  মোবারক আলী, রাজন ফেরদৌস,পারভেজ ইকবাল, রতন বডুয়া, সোমা দত্ত, মিনহাজ চোধুরী,খোরশেদ আলম, নাসির, ফিরোজ আলম  ছাড়াও অনেকেই।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পর্বে মঞ্চ মাতান কণ্ঠশিল্পী শ্রাবন্তী। সুইজারল্যান্ডের স্থানীয় শিল্পীদের পরিবেশনাও ছিলো উপভোগ করার মতো। এভাবে মঞ্চে আসেন বাপ্পা মজুমদার। তার সুললিত জন্ঠে ‘ বায়োস্কোপের নেশা ‘ বাস্তবিক অর্থেই নেশা লাগিয়ে দেয় উপস্থিত দর্শকদের।

ডাইনে তোমার চাচার বাড়ি
বাঁয়ের দিকে পুকুরঘাট
সেই ভাবনায় বয়স আমার বাড়ে না
সেই ভাবনায় বয়স আমার বাড়ে না।

দলছুট আর বাপ্পা মজুমদারের কন্ঠে কন্ঠ মিলিয়ে সুইজারল্যান্ডসহ ইউরোপে বসবাসরত বাঙালিরা নষ্টালজিক স্মৃতি আর ভাবনার জালে আটকে পার করেছেন পুরোটা অনুষ্ঠান।

অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইয়াসিন। তিনি বলেন, আগামীতে এই মেজবানের পরিসর আরো বিস্তৃত করা হবে।

সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, চাটগাঁইয়া মেজবানের আগামী আসরের তারিখ অচিরেই ঘোষণা করা হবে।