আকাশে উড়ছে বাঁশখালীর ক্ষুদে বিজ্ঞানী আশিরের তৈরি বিমান

বাংলাদেশ মেইল ::

বিমান উড়তে দেখে তাতে চড়ার সাধ তো অনেকেরই জাগে, আকাশে উড়াল দেবার সেই সাধ মেটাতে বাঁশখালীর ক্ষুদে তরণ আশির উদ্দীন নিজেই তৈরি করে ফেললেন বিমান। এ যেন এক অবিশ্বাস্য ব্যাপার। শুধুই কি তাই? শুধু কৌতুহল আর মনের জোরে বানিয়ে ফেলেছেন অসংখ্য বিমান, ড্রোন, হেলিকপ্টার ও স্পিটবোট। বিমানগুলো যেমন আকাশে উড়তে পারে ঠিক স্পিডবোটগুলোও পানিতে ভেসে চলতে পারে।

। এ সব উদ্ভাবনের জন্য বাড়িতে ছোটখাটো একটা ল্যাবরেটরিও গড়ে তুলেছেন এই যুবক। তার এই সফলতার গল্প ইতোমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়া ও ইউটিউবে ছড়িয়ে পড়েছে।

২১ বছর বয়সী ক্ষুদে তরুণ আশিরের উদ্দীনের বাড়ি চট্টগ্রামের বাঁশখালীর উপজেলার পুইছড়ি ইউনিয়নের সমদ আলী সিকদার পাড়ায়। আশির স্থানীয় স্কুল ও কলেজ থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শেষে এখন চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট শামশুন্নাহার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ৩য় বর্ষে অধ্যয়নরত।

২০১৬ সাল থেকে এসব বিমান, ড্রোন, হেলিকপ্টার বানিয়ে আসছেন ক্ষুদে এই তরুন। তার তৈরি বিমানের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ বিমানের ড্রিমলাইনার বোয়িং-৮৭৮, ফাইটার বিমান মিগ-২৯, চেসনা ও ইউএস বাংলার বিমানের মডেল। তাছাড়া এমকি ড্রোন, স্পিটবোট, ওয়াটার পাম্প, ড্রিল মিশিন, লিওন ইঞ্জিন। এর মধ্যে তিন কেজি ওজনের বোয়িং- ৮৭৮ ড্রিমলাইনারটি ঘণ্টায় ৩০০ থেকে ৩৫০ কিলোমিটার গতিতে উড়তে সক্ষম বলে দাবি তার।

আশিরের ওই ল্যাবে গিয়ে দেখা যায় বাংলাদেশ বিমানের ড্রিমলাইনার বোয়িং-৮৭৮, ফাইটার বিমান মিগ-২৯, চেসনা ও ইউএস বাংলার বিমানের আদলে বানানো ৯টি বিমান। তা ছাড়া ড্রোন, হেলিকপ্টার, স্পিটবোট, ওয়াটার পাম্প সহ অসংখ্য যন্ত্রপাতি।

তার বানানো ওয়াটার বোট জ্বালানি নয়, বাতাসের শক্তিতে চলে। এ সবের পাশাপাশি একটি ড্রোনও তৈরি করেছেন আশির। সেটি দুর্গম বা দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার ছবি তুলতে ও ফসলের ক্ষেতে কীটনাশক ছিটাতে সক্ষম বলে জানান তিনি।

আশির উদ্দীন বলেন, ছোটকাল এসবের প্রতি প্রবল ইচ্ছাশক্তি কাজ করত। স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে নিজেই বিমান তৈরি করব। মনে মনে সৃষ্টিকর্তাকে বলতাম, আমি একটা বিমান বানাতে চাই। পরে পরিবারের কাছ থেকে পাওয়া হাত খরচের টাকা জমিয়ে রাখতাম। তা দিয়ে অনেক কষ্টে ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিমান, ড্রোন, স্পিটবোট, হেলিকপ্টার মডেল তৈরির প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ সংগ্রহ করতাম। কলেজে পড়ার সময় বন্ধুরা যখন অবসর সময়ে মাঠে খেলত, তখন আমি আমার ল্যাবে নানা যন্ত্রাংশের সঙ্গে সময় কাটাতাম। দিনের বেশিরভাগ সময় আমার ল্যাবেই কাটতো।

বিমান তৈরির কাজ কিভাবে শুরু করেন জানতে চাইলে আশির বলেন,আমি কোন মডেলের বিমান তৈরি করব, শুরুতে কাগজে তার একটা স্কেচ আঁকি, তারপর সেটা নিয়ে কাজ শুরু করি। স্কেচ অনুযায়ী যন্ত্রাংশ সংগ্রহ করে তা সংযোজনের উপযোগি করি। তারপর প্রয়োজনীয় ইলেক্ট্রি্ক্যাল কাজ শেষ করে ডিজাইন করি। এখন বিমানগুলো আকাশে উড়ছে। মানুষ দেখে খুশি হয়। একটা সময় ছিল অনেকে হাসাহাসি করত। আমার অনেকগুলো বিমান উড়ানোর আগেই নষ্ট হয়ে গেছে। এখন এ বিষয়ে অবিজ্ঞ হওয়ায় কিছু তৈরি করতে চাইলে আর নষ্ট হয় না। মা-বাবা এবং ছোট দুই ভাইসহ পরিবারের সবাই সবসময় আমার পাশে ছিলেন। তারা নানাভাবে আমাকে অনুপ্রেরণা দিতেন। আমি যা চাইতাম তাতে তারা সহযোগিতা করত। এখন আমার স্বপ্ন আমি যাত্রীবাহী বিমান বানাব। সে বিমানে আমি নিজেও যাত্রী হয়ে ঘুরতে চাই। এর জন্য প্রয়োজন সরকার ও প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করি।

আশিরের ভাই মোবাশ্বির উদ্দিন বলেন, আমার ভাই ছোট থেকেই এসব কাজ নিয়ে পড়ে থাকত। সে অবসর সময়ে তার রুমে বসে বেশিরভাগ সময় নানা ধরনের যন্ত্রপাতি নিয়ে সময় ব্যয় করত। তার এই এই শ্রমের সফলতা ও স্বপ্ন পুরণ হতে দেখেই আমি সত্যই আনন্দিত। আমরা চাই সে সরকারি ভাবে সহযোগিতা পাক।যাতে সে তার স্বপ্ন পুরনে অনেকদুর এগিয়ে যেতে পারে।

আশিরের বাবা শাহাব উদ্দীন বলেন, আশির ছোট থেকেই ইলেকট্রনিক জিনিসপত্র নিয়ে পড়ে থাকত। সে বেশির ভাগ সময় এইগুলো নিয়ে তার রুমে সময় কাটাত। তার প্রতিভা দেখে আমি তাকে উৎসাহ উদ্দীপনা যোগাতাম। আমার ছেলের কাজ দেখে আমি একজন বাবা হিসেবে গর্ববোধ করি। আমি চাই ও সরকারের কাছ থেকে যথাযথ সুযোগ-সুবিধা পাক এবং ওর মেধাটা দেশের কাজে লাগাক।

স্থানীয় তরুণ সংগঠক শাকের উল্লাহ সাগর বলেন, আশিরের সফলতায় আজ পুরা বাঁশখালীবাসী গর্বিত। আমি তাকে খুব কাছ থেকে দেখেছি তার যথেষ্ট মেধাশক্তি রয়েছে। সরকার যদি তাকে প্রয়োজনীয় সাহায্য সহযোগিতা দিয়ে গড়ে তোলে, তাহলে আমি মনে করি সে দেশের অগ্রযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।