প্রযুক্তি যখন গলার কাঁটা

রাহাত আহমেদ ::

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যক্তি জীবনে গোপনীয়তা রক্ষায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে। বর্তমানে প্রযুক্তির কল্যাণে একজন মানুষের গোপনীয় তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব। ওয়ার্ডআপ কিংবা ভাইবারের মাতো আপস থেকেও তথ্য নেয়া সম্ভব করে দিয়েছে আইপিডিআর প্রযুক্তি। এরআগে কোন ব্যক্তি  সিডিআর বা ডিটেইলস  কল রেকর্ড সংগ্রহ করে কোন ঘটনা তদন্তে গোয়েন্দা সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ অনুসঙ্গ ছিলো মুঠোফোন অপারেটরদের দেয়া তথ্য। বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা ইন্টারনেট প্রটোকলের বহুবিদ ব্যবহারের কারণে আইপিডিআর গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে৷

আইপিডিআর একটি ফোন ডিভাইস দ্বারা উৎপন্ন একটি কল বা বার্তার বিশদ বিবরণ ট্র্যাক করতে সহায়তা করে এবং যে নম্বর থেকে কলটি করা হয়েছিল, গন্তব্য পোর্ট, শুরু এবং শেষের তারিখ এবং সময়ের মতো তথ্য অন্তর্ভুক্ত করে। এই প্রযুক্তিটি 2G পরিবেশে কাছাকাছি অবস্থানের সাথে কাজ করে।

ইন্টারনেট প্রটোকল ডিটেইলস বা আইপিডিআর রেকর্ড কোন সরকারি সংস্থা খুব সহজেই পেতে পারে। আপনি কোন গোপন বার্তা কাউকে শেয়ার করেছেন কিংবা কোন তথ্য আদানপ্রদান করেছেন কিনা সেটি সহজেই জেনে যাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সময়ের সাথে সাথে সেই প্রযুক্তি আরও আধুনিক হয়েছে। তবে সব মানুষের উপর নজরদারি করা একটি কঠিন বিষয়। শুধুমাত্র সন্দেহজনক কোন মোবাইল নাম্বারকে অনুসরণ করা সহজ।

আইপি এর কাজ হলো শুধুমাত্র প্যাকেট হেডারের আইপি ঠিকানার উপর ভিত্তি করে সোর্স হোস্ট থেকে গন্তব্য হোস্টে প্যাকেট পৌঁছে দেওয়া। এই উদ্দেশ্যে, আইপি প্যাকেট কাঠামো সংজ্ঞায়িত করে যা বিতরণ করা ডেটাগুলিকে ধারণ করে। এটি উৎস এবং গন্তব্য তথ্যের সাথে ডাটাগ্রাম লেবেল করার জন্য ব্যবহৃত অ্যাড্রেসিং পদ্ধতিগুলিও সংজ্ঞায়িত করে।

ঐতিহাসিকভাবে, ১৯৭৪ সালে ভিন্টন সার্ফ এবং রবার্ট কান দ্বারা প্রবর্তিত মূল ট্রান্সমিশন কন্ট্রোল প্রোগ্রামে আইপি ছিল সংযোগবিহীন ডেটাগ্রাম পরিষেবা, যা একটি সংযোগ-ভিত্তিক পরিষেবা দ্বারা পরিপূরক ছিল যা ট্রান্সমিশন কন্ট্রোল প্রোটোকলের ভিত্তি হয়ে ওঠে। তাই ইন্টারনেট প্রটোকল স্যুটকে প্রায়ই টিসিপি/আইপি বলা হয়।

কোন আইপি বা ইন্টারনেট অনুসরন বা কথোপকথনের  ইতিহাস সংগ্রহ করার মতো প্রযুক্তি রয়েছে। সেসব প্রযুক্তি সাধারন মানুষের গোপনীয় তথ্যকে অবাধ করেছে। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষার কোন আইন সেভাবে নেই।  একারনে ফেসবুক কিংবা আইপি বেইসড যোগাযোগ অনেকটাই অনিরাপদ হয়ে পড়েছে। কোন সাধারণ মানুষের ব্যক্তি জীবনে আড়িপাতার অধিকার গোয়েন্দা সংস্থা বা রাষ্ট্রের কতখানি রয়েছে সেটিও এখন বেশ জোরেসোরে আলোচনা হচ্ছে। রাস্ট্রের জন্য ক্ষতিকর বা হুমকি নয় এমন গোপনীয় তথ্য তৃতীয় পক্ষ সংগ্রহ বা ফাঁস করার আইনগত প্রতিকারের ব্যবস্থা রয়েছে উন্নত বিশ্বে। কিন্তু আমাদের দেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা কিংবা সরকারি, বেসরকারি সংস্থার  গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির কথোপকথন ফাঁস হচ্ছে। এটি ব্যক্তিগত গোপনীয়তা অধিকার লঙ্ঘন হলেও আইনী প্রতিকার নেই৷ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সুনামহানির মামলা করে তেমন প্রতিকার পাওয়াও সম্ভব হচ্ছে না।

অনেক ওয়েবসাইট এবং অ্যাপ ব্যক্তিগত তথ্য তৃতীয় পক্ষের কাছে বিক্রি করে দেয়। যার কারণে তৃতীয় পক্ষে এসব তথ্য নিয়ে ই-মেইল অ্যাড্রেস এবং ফোন নম্বরে পুশ করতে থাকে। ব্যক্তির গোপনীয়তার সাথে মর্যাদার সম্পর্ক জড়িত। সাংবিধানিকভাবে কারো অধিকার লঙ্ঘন করার অধিকার কাউকে দেয়া হয়নি। গোপনীয়তার অধিকার নাগরিকের অন্যতম মৌলিক অধিকার। সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন হলে যেকোনো ব্যক্তি আইনি প্রতিকার পেতে পারেন।

আপনি যখন ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ই-মেইল, কোন জরিপে অংশগ্রহণ করেন অথবা কোন বিষয়ে মতামত প্রদান অথবা যোগাযোগের ক্ষেত্রে কোন তথ্য প্রদান করে থাকেন সেক্ষেত্রে আপনার ব্যক্তিগত তথ্যাবলি সংগ্রহ করা সম্ভব হবে। আপনার প্রশ্নের সঠিক উত্তর প্রদানের জন্য আপনার তথ্যগুলো অন্যান্য সরকারি এজেন্সি অথবা ব্যক্তির নিকট তা প্রেরণ করা হতে পারে ।