বিলের মাঝ বরাবর প্রস্থান
বহিরাগতদের নিয়ে চবি ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের দুই মিনিটের মিছিল

চবি প্রতিনিধি :::

দীর্ঘ সাত বছর পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের আংশিক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় সংসদ। সভাপতি আলাউদ্দিন মহসিনকে নিয়ে শুরু থেকে অভিযোগ অনুযোগ। বিএনপি নেতা মীর হেলালের এই অনুসারী নিজের কাঁধ থেকে অছাত্র ও নিষ্ক্রিয়  তকমা সরাতে বহিরাগতের নিয়েই মিছিল করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। মিছিলে অংশ নেয়াদের অধিকাংশই হাটহাজারী উপজেলা ছাত্রদলের নেতাকর্মী। বহিরাগতদের এই মিছিলে যোগ দিয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের কর্মীরা।

জানা যায়, গতকাল ১৬ আগস্ট বুধবার সকাল নয়টায় বহিরাগতদের নিয়ে ঝটিকা মিছিল করেছে সদ্য ঘোষিত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের কমিটির একাংশ। স্থানীয় সুত্রে জানাযায়, গত বুধবার সকাল নয়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের দিকে ৩০-৪০ জন ছেলে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের ব্যানারে একটা ঝটিকা মিছিল করে খুব দ্রুত সরে যায়।

প্রত্যক্ষদর্শিরা জানান, মিছিল শেষে ফিরে যাওয়ার সময় তারা চবির মূল সড়ক দিয়ে  না গিয়ে বিলের মাঝখান দিয়ে  ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন। মিছিলের স্থায়িত্ব ছিলো দুই মিনিটের মতো। ছবি তুলেই সটকে পড়েন মিছিলকারীরা।

শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ছাত্রদলের  সদ্য ঘোষিত কমিটির সভাপতি আলাউদ্দিন মহসিন ও সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন হৃদয়ের নেতৃত্বে এই মিছিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাত্র চার জন ছাত্র অংশগ্রহন করেছে। মিছিলে অংশ নেয়া কর্মীদের সবাই বহিরাগত।

ছাত্রদলের নেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ছাত্রলীগের সাথে কন্ট্রাক করে দুই মিনিটের  মিছিলে অংশ নেয়াদের সবাই  বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মীর হেলালের অনুসারী। শনাক্তকারী শিক্ষার্থীদের মতে এরা হাটহাজারি উপজেলা ও পৌরসভা ও চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের নেতাকর্মী । তাদের কেউই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায় মিছিলে অংশ নিয়েছেন  হাটহাজারী পৌরসভা ছাত্রদলের সদস্য সচিব সাহেদ খান, হাটহাজারী ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক নেজাম উদ্দিন, সদস্য সম্রাট, মেখল ইউনিয়ন ছাত্রদলের আহবায়ক ইয়াসিন চৌঃ ফরহাদ, সদস্য সচিব আরমান আজিমসহ হাটহাজারী ও চট্টগ্রাম মহানগরের ৩০-৩৫ বহিরাগত কর্মী।  চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শহরে থেকে দুরে হওয়ায় মূলত যে কোন রাজনৈতিক বা অরাজনৈতিক কর্মসূচি বিশ্ববিদ্যালয়ের মুল ফটক, একাডেমিক বিল্ডিং বা শহীদ মিনার চত্বরে পালন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের পাশে এই প্রথম কোন ছাত্রসংগঠন মিছিল করেছে ;  যা একাডেমিক বিল্ডিং থেকে অন্তত  তিন কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

পদবঞ্চিত বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলনেতা সালমত উল্লাহ সালাম জানান, চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের সদস্য সচিব শরিফুল ইসলাম তুহিন, চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সাব্বির, হাটহাজারী উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়ক ও উত্তর জেলা ছাত্রদলের সভাপতি প্রার্থী তকিবুল হাসান, হাটহাজারী উপজেলা যুবদলনেতা সালমান শাকিল এসময় মিছিলের সম্মুখে ছিলেন। তারা মিছিলের ছবি তোলার কাজে গাইড করছিলেন,  সেইসাথে মিছিলের ছবি ও ভিডিও নিচ্ছিলেন। মিছিল শেষ হবার পর তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয় দুই নং গেইট এলাকায় ঝোঁপের ভিতরে বিরাণীর প্যাকেট নিয়ে বাকবিতন্ডায় লিপ্ত হতে দেখা গেছে।

প্রসঙ্গত, দীর্ঘ সাত বছর পর  গত ১১ আগষ্ট পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্র থেকে। কমিটিতে স্থান পাওয়া সভাপতি আলাউদ্দিন মহসিন ও সাংগঠনিক সাজ্জাদ হোসেন হৃদয় মীর হেলালের অনুসারী, সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমান, গোলাম আকবর খন্দকারের অনুসারী, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক ইয়াসিন ডাঃ শাহাদাত হোসেনের অনুসারী। তারমধ্যে সিনিয়র সহসভাপতি মামুনুর রশীদ মামুন পদত্যাগ করেছেন। মামুন আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও আসলাম চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। ২০০৮ থেকে ২০১০ শিক্ষাবর্ষের এসব শিক্ষাজীবন শেষ অন্তত পাঁচ বছর আগে। একাডেমিক কাউন্সিলের নির্দেশনা অনুযায়ী  বর্তমানে  কারও ছাত্রত্ব থাকার কথা নয়।

সুত্রমতে, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মীর হেলাল নিজের লোক বসিয়েছে সভাপতি পদে। আলাউদ্দিন মহসিন নামের এই নেতার বাড়িও চট্টগ্রামে নয়। আট বছরের বেশি সময় ধরে  মহসিন ছাত্রদলের সাংগঠনিক কার্যক্রমের সাথে জড়িত নন৷  বর্তমানে নিয়মিত ব্যবসায়ী,  নিজ জেলায় বসবাস করছেন তিনি। কেন্দ্রীয়  ছাত্রদলের সভাপতির পদ থেকে নানা অনিয়মের অভিযোগে সম্প্রতি সরিয়ে নেয়া রওনকুল হাসান শ্রাবণও মীর হেলালের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন ৷ চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের কমিটিও শ্রাবণ ও মীর হেলালের  হাতে বানানো। চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের এই রকেট কমিটি ঘোষণার পর মীর হেলালের বিরুদ্ধে নগরীতে ঝাড়ু মিছিল করে পদবঞ্চিত ছাত্রদল নেতাকর্মীরা। রকেট ও বিকাশে টাকা লেনদেনের ছবি ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের কমিটি পরিচিতি পায় ‘ রকেট কমিটি’ হিসেবে। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ ব্যারিস্টার মীর হেলালের হস্তক্ষেপে মহানগরের মতো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাংগঠনিক কাঠামোতে শেষ পেরেক টুকা হয়েছে। একারণে বহিরাগতের নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল করাতে হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নগর ছাত্রদলের দুই শীর্ষস্থানীয় নেতা জানান, মীর হেলালের নির্দেশনা অনুযায়ী নতুন কমিটিকে স্বাগত জানাতে স্বল্প সময়ের মিছিলের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। কিন্তু ভোরে স্পটে গিয়ে দেখা যায় চারজন ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন শিক্ষার্থীই নেই। তাদেরকে ব্যাগ, খাতা কলম নিয়ে আসার নির্দেশনা দেয়া হয়েছিলো, যাতে চেনা যায় । মুলত ফেসবুকে ছবি ছাড়ার জন্য নেতার নির্দেশে দুই মিনিটের মিছিল করেছি। ‘

ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের এমন অভিনব মিছিলের ছবি ছড়িয়ে পড়েছে।

এইবাংলা/ তুহিন